বগুড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে পোড়াদহ মেলা শেষ হলো। দিনব্যাপী এ মেলায় ৬টি উপজেলার অধিকাংশ মানুষের একটি উৎসবের দিন হিসেবে কেটে যায়। মেলা শেষ হলেও পরের দিন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।
মেলায় এবার ৭৬ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয় ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। এছাড়া আরেকটি বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয়েছে ৬০ কেজি ওজনের।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সাকাত হোসেনের ৭৬ কেজির বাঘাইড় মাছটি দেখতে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুয়। তিনি ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করেছেন বলে জানান।
অন্যদিকে, মেলায় নজর কেড়েছে ৬০ কেজি ওজনের যমুনা নদীর বিশাল বাঘাইড় মাছটিও। ব্যবসায়ী শুকুর আলী মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা। হরেক রকমের মাছের মধ্যে মেলায় এবার স্থান পেয়েছে তিন কেজির মিষ্টি মাছ।
বগুড়ার পোড়াদহ মেলা কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছর পূর্ব থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলা বসে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বুধবার মেলাটি হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে পোড়াদহ মেলা নামেই পরিচিত।
কথিত আছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে এই মেলা হয়ে আসছে। মেলাস্থলে ইছামতি নদীর তীরে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। এক পর্যায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয়। প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরাস্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে।
বগুড়া সদর, গাবতলী, ধুনট, সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলাসহ ৬ উপজেলার মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষের পদচারনায় মুখরিত এ মেলা। মেলার আশপাশে অবস্থিত গ্রামগুলোতে প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন এই মেলা দেখতে। বগুড়ার গাবতলীর গোলাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে যেন উৎসব বয়ে যায়। মেয়ে জামাইয়ের সাথে আত্মীয় স্বজন এসে ভিড় করে।
এদিকে মেলা উপলক্ষে বগুড়া শহরের চাষীবাজার, গাবতলীর অদ্দিরগোলা, ৫ মাইলসহ বিভিন্ন স্থানে মাছের দোকান বসেছে। মেলায় পুরুষদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে বলে এলাকার গৃহবধূরা মেলা ঠিকভাবে দেখতে পারেন না। এ কারণে পোড়াদহ মেলার পরের দিন বৃহস্পতিবার এলাকার গৃহবধূ ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের জন্য আয়োজন করা হয় বউমেলার। এই মেলায় নারীরাই কেনাকাটা করবেন।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঞা জানান, মেলায় সকল প্রকার নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। বিশাল আকৃতির মাছের মেলা এই পোড়াদহ মেলা, যা বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করে।