কারিমুল হাসান লিখন, ধুনটঃ আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত। শিশুর স্বাস্থ্য নামের সম্পদটাই যদি হুমকির মুখে পড়ে তাহলে ভবিষ্যতটা কেমন হতে পারে এমন ভাবনার নিয়ে নেই কোন সচেতনতা। বগুড়ার ধুনট উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলের গড়ে শতকরা ৬৫ জন শিশু শিক্ষার্থী রোবো নামের কমল পানীয় সেবনে আকৃষ্ট। নামে বে-নামে বিভিন্ন কোস্পানীর লম্বা প্লাষ্টিক পলিব্যাগে মোড়ানো এ কমল পানীয় বিক্রি হয় ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায়। ক্রয়ে সহজলভ্য ও খেতে সুস্বাদু আইস ললির মত হওয়ায় জমাটবদ্ধ ফ্রিজিং রোবোতে আকৃষ্ট হচ্ছে সহজেই। এ ধরনের শিশু খাদ্য তৈরীতে কি কি ব্যাবহার করা হয় এ নিয়েও অবিভাবকসহ জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এ শিশু খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর এ নিয়েও চিন্তিত অভিভাবক গন। উপজেলা জুড়ে পানীয় বিক্রির দোকানের ফ্রিজে রোবো নামের তরল শিশু খাদ্য নেই, এমন দোকান খুব কমই পাওয়া যায়।
সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতে গড়ে ওঠেছে রোবো তৈরীর লাইসেন্স বিহীন অবৈধ কারখানা। জনশ্রুতিতে আছে রোবোতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর রং ও বিভিন্ন ফলের ফ্লেবার। নামে বেনামে গড়ে ওঠা কারখানা থেকে বাজার বিপনন হয় বিভিন্ন দোকানে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যান্য বিরতীতে একটি পানীয় বিক্রির দোকানে গড়ে প্রতি ২০ জনের মধ্য ১৩ জন শিশু শিক্ষার্থী রোবো নামের পানীয় সেবন করে থাকে। রোবো ক্রয়ের চাপ সামলাতে অন্যান্য পন্য বিক্রিতে হিমসিম খেতে হয় প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন দোকানীদের। কথা হয় এক কেজি স্কুলের নার্সারি ক্লাসের সায়েমান নামের এক শিশু শিক্ষার্থীর সাথে। তাকে প্রশ্ন করতেই সে জবাব দেয় সকালে স্কুলে এসে একটি, কিছু সময় পর একটি এবং ছুটির পর একটি রোবো খেয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানী বলেন, একটি শিশু স্কুলে আসার পর অন্তত ২ বার রোবো কিনে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীর মরিয়ম খাতুন নামের এক শিশু শিক্ষার্থীকে একসাথে ৫টি রোবো নামের পানীয় কিনতে দেখে জিজ্ঞাসা করা হলো ৫টি কেন? সে তৎক্ষনাত উত্তর দিলো আগামিকাল শুক্রবার স্কুল বন্ধ। তাই বাড়ির ফ্রিজে রেখে খাবো। সাতদিন ব্যাপী তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যে সকল শিশু খাদ্যে অনিহা ও অরুচিতে ভুগছে তাদের বেশির ভাগ শিশু রোবো নামের পানীয়তে আকৃষ্ট। আশ্চার্যের বিষয় হলো শিশু শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তোমাদের টিফিনের টাকা কে দেয়? উত্তরে ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই বলেছে টিফিনের টাকা মা দেয়।
শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় মায়েরা কতটা সচেতন? তারা খবর রাখেন, তার সন্তান কি খাচ্ছে। খোরশেদ আলম নামের এক শিক্ষকের কাছে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ সচেতনতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনই ক্লাসে স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা মুলক দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকি। তবে কিছু অবিভাবক আছে যারা উল্টো বুঝে ব্যাতিক্রম মনোভাব প্রকাশ করে। একজন শিক্ষার্থীর মা বলেছিলেন, আমার সন্তানের টিফিনের টাকা আমি দেই, সে যা ইচ্ছা খাবে। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাবো।
এই যদি হয় সচেতনতা তাহলে স্বাস্থই সম্পদ এ কথাটাই এক সময় হুমকির মুখে পড়বে। শুধু রোবো কান্ডেই শিশুদের নিয়ে সমাজে রয়েছে নানা অসচেতনতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যবস্থা কঠোর হওয়া এবং নামে বে-নামে নানা ধরনের রোবো ক্রয় বিক্রয়ে আসল, নকলসহ গুনগতমান যাচাই করত আইনী ভাবে প্রশাসন তৎপর হলে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুকি থেকে মুক্তি পেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।