সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে ১০টি পাটের গুদাম। এতে প্রায় ১৭ হাজার মণ পাট ও ৬০ হাজার পিস পাটের বস্তা ছাই হয়ে গেছে। সোমবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে পৌরশহরের ঝিকিড়া পাট বন্দর এলাকায় পাটের গুদামে আগুন লাগে। এতে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে মালিকপক্ষ।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গুদামগুলো ভাড়া নিয়ে ১৩ জন ব্যবসায়ী পাট মজুদ করে রাখতেন। এদের মধ্যে মোকলেছুর রহমান ডাবলুর আড়াই হাজার মণ, ইউনুছ আলী তালুকদারের এক হাজার ২শ মণ, আইয়ুব আলীর ৪শ মণ, শামীম রেজার ২শ মণ, রিপনের এক হাজার মণ, শ্রী গজন কুমার সাহার ১২শ মণ, আসাদুল ইসলামের চার হাজার মণ, রজব আলীর দুই হাজার মণ, সোলাইমানের দুই হাজার মণ, আব্দুর রউফ সরকারের আড়াইশ মণ, শ্রী লোটন কুমার কুন্ডুর ৩শ মণ পাট এবং শহিদুল ইসলামের ৬০ হাজার পিস বস্তা ছিল। এছাড়াও আরো অনেক ব্যবসায়ী সেখানে পাট ও পাটের বস্তা মজুদ করে রেখেছিলেন।
গুদামের শ্রমিকরা জানান, হঠাৎ মধ্যরাতে এলাকাবাসীর চিৎকার-চেঁচামেচিতে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। বেরিয়ে দেখেন গুদামে আগুন জ্বলছে। গুদামের সামনের দিকে লাগা আগুন মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যায় বাকি গুদামগুলোতে।
সংবাদ পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিস। পরে পাবনাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে যোগ দেয় আরো সাতটি ইউনিট। মোট আটটি ইউনিটের ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
গুদামে থাকা পাটের মালিক আসাদুল ইসলাম জানান, গুদামে তার চার হাজার মণ পাট ছিল। বর্তমান এর বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এতবড় ক্ষতি হওয়ায় তিনি এখন নিঃস্ব। পরিবার পরিজন নিয়ে কেমনে দিন চলবে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই বলছিলেন তিনি।
অপর এক ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী জানান, গুদামে ১২শ মণ পাট রেখে পরে রপ্তানি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো না। রাতের এমন ঘটনা সব আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেল। আগুন নিভলেও রেখে গেলো ক্ষতচিহ্ন।
উল্লাপাড়া পাট বন্দর বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোকলেছুর রহমান ডাবলু জানান, গুদামে তার আড়াই হাজার মণ পাট মজুদ ছিল। কিছুদিন আগেই কৃষকদের কাছ থেকে পাট সংগ্রহ করে গুদামে মজুদ করে রাখা হয়েছিল। এমন ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। তবে আগুন লেগে পাট পুড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলে পাটের সংকট দেখা দিতে পারে।
উল্লাপাড়া জুট ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম জানান, রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ১০টি গুদামে থাকা প্রায় ১৭ হাজার মণ পাট এবং ৬০ হাজার পিস বস্তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আট কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (পাবনা অঞ্চল) সাফিউল হাসান ভূইয়া জানান, অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে এতে প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুন লাগার কারণ তদন্তের পর জানা যাবে।