শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাশুরা মোকাদ্দেস তানাজ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। গত রবিবার (১২ মে) এসএসসির ফলাফলে তানাজ জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে তানাজ পৃথিবীতে নেই। গত ৩১ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় সে।
তানাজের মামা কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনতে মাইক্রোবাসে সপরিবারে ঢাকা যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার জামান ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী তানাজ ও তার ছোটভাই আড়াই বছর বয়সী শিশু আনাছ। আহত হয় তাদের বাবা-মাসহ তিনজন।
গত রবিবার এসএসসির প্রকাশিত ফলাফল স্বজনদের সেই দুঃখকে আরও উসকে দিয়েছে। কান্না থামছে না তানাজের পরিবারের লোকজনের।
শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া গ্রামের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব ও মোছা. মনিরা বেগম দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মাশুরা মোকাদ্দেস তানাজই বড়। তানাজ শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো।
সেই সুবাদে শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে সেখানেই থাকতো তানাজের পরিবার। শুধুমাত্র বাংলা বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড ছাড়া বাকি সব বিষয়েই ‘এ’ প্লাস পেয়েছে তানাজ। এ সংবাদ শোনার পর তার বাড়িতে বিষাদ নেমে আসে।
পৌর শহরের নওহাটা এলাকায় তানাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তানাজের মা মোছা. মনিরা এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। মা কথা বলতে পারে না। কিন্ত সন্তানের ছবি ও মেয়ের স্কুলের আইডি কার্ড বুকে নিয়ে অঝোরে কান্না করছেন।
বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব কন্যার শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের সেই স্বপ্ন। রেজাল্টের পরের দিন সোমবার স্কুলে হাজির হয়েছিল তানাজের সতীর্থরা। তানাজের শোকে সবাই কেঁদেছে। ভালো ফলাফল তানাজের শোকের ছায়ায় মলিন হয়ে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। সবাই মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরেছে।
তানাজের বাবা তোরাব বলেন, ঘাতক বাস আমার পরিবারের সকল সুখ-শান্তি কেড়ে নিয়েছে। আদরের দুই সন্তানের লাশ বহনের চেয়ে আমার মৃত্যু হলে বেঁচে যেতাম। মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল এখন যেন মরণ কাঁটা হয়ে কলিজায় লাগছে।