সম্প্রতি এক হিন্দু মেয়েকে নির্যাতন করার পর পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, উত্তেজিত জনতাকে এক মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতনের পর একটি পুকুরে নামতে বাধ্য করছেন।
সুইডেনে একাধিকবার প্রকাশ্যে কোরআন পুড়িয়ে বিতর্কিত ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা সম্প্রতি এবং গত আগস্টে একই ভিডিও তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন। আগস্টে তার পোস্ট করা ওই দাবির ভিডিওটি প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ বার দেখা হয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৬৯ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও দেখানো হয়েছে। তবে ভিডিও হিন্দু মেয়েকে নির্যাতন নয়, মেয়েটি মুসলিম ও তার নাম আফসানা ইবাদ টিকলি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েকে নির্যাতনের পর পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করার দাবিটি সঠিক নয়। বরং, হেনস্তার শিকার মেয়েটি মুসলিম। তার নাম আফসানা ইবাদ টিকলি। এছাড়াও তার মারা যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সাকির উল্লাহ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৭ আগস্ট প্রচারিত আলোচিত ভিডিওটির একটি বর্ধিত সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভাইরাল ভিডিওটির শেষাংশে ওই নারীকে শুধু পুকুরে নিয়ে যেতে দেখা গেলেও এ ভিডিওটিতে তাকে পুনরায় পুকুর থেকে সুস্থ অবস্থায় তুলে আনতেও দেখা যায়। এছাড়াও ভিডিওটির শেষের দিকে একজন ব্যক্তিকে এসে ওই নারীকে নিয়ে যেতেও দেখা যায়। পাশাপাশি জানা যায়, ভিডিওটি গত ৭ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধারণ করা হয়েছে এবং ওই নারী একজন ছাত্রলীগ নেত্রী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরবর্তীতে ওই ভিডিওটি তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলা মিরর নিউজ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ৮ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনতার হাতে ছাত্রলীগ নেত্রী আটক শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই ভিডিওটির সাথে আগের ভিডিওটির মিল রয়েছে। তবে উক্ত ভিডিওটির শেষাংশে হেনস্তার শিকার ওই নারীকে নিয়ে আগের ব্যক্তিকে একটি রিক্সায় করে চলে যেতে দেখা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মোহাম্মদ মোস্তফা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ আগস্ট প্রচারিত একটি আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটিতে হেনস্তার শিকার নারীর ব্যাগ থেকে প্রাপ্ত জিনিসগুলো দেখানো হচ্ছে। ভিডিওটির নিচের দিকে হেনস্তার ঘটনার কয়েকটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া একজন নারী হেনস্তাকারীকে উক্ত ভিডিওতে হেনস্তার শিকার নারীর ব্যাগ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র বের করে ক্যামেরার উদ্দেশ্যে দেখাতে লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির এক পর্যায়ে হেনস্তার শিকার হওয়া নারীর ব্যাগ থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পোলিং এজেন্ট সংক্রান্ত পরিচয়পত্র বের করে দেখাতে দেখা যায়। যেখানে নামের স্থলে আফসানা ইবাদ নাম দেখতে পাওয়া যায়। যা থেকে হেনস্তার শিকার নারীর নামের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সুতরাং, আফসানা ইবাদ টিকলি নামের মুসলিম নারী ছাত্রলীগ কর্মীর হেনস্তার পুরোনো ভিডিওকে বাংলাদেশে হিন্দু মেয়ে নির্যাতন ও হত্যার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।