পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে এসে তাসিম মোল্লা নামে এক বছর বয়সী শিশুর তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। সঠিকভাবে ইনজেকশন পুশ না করায় এবং চিকিৎসা অবহেলায় এমনটা ঘটেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর বাবা জাহিদুল ইসলাম জাহিদের। এ ঘটনায় সিভিল সার্জনসহ তিনি বিভিন্ন মহলে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পাবনা প্রেস ক্লাবে পাঠানো জাহিদুল ইসলামের লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, তাসিম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১০ জুন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করান বাবা। ১২ জুন সকালে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কর্তব্যরত নার্স তাকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশনটি রক্তনালীতে প্রয়োগ না করে নার্স মাংসপেশিতে প্রয়োগ করেন।
ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই শিশুটির ডান হাত ফুলতে থাকে এবং যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। এরপর ইনজেকশন পুশ করার স্থান বেগুনি বর্ণ ধারণ করে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি ক্ষত স্থানে বরফ দিতে বলেন এবং নাপা সিরাপ খাওয়াতে বলেন।
১৩ জুন আবারও কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে প্রেসক্রিপশনে একটি মলম লিখে দেন। ১৪ জুন তাকে শিশু ওয়ার্ডে রেফার্ড করে দেন চিকিৎসক। ১৮ জুন তার শরীরে রক্ত দিতে বলেন। রক্ত দিয়ে ওই দিন রাত ১২টার দিকে শিশুসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন স্বজনরা।
২১ জুন হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কেটে চিকিৎসককে দেখালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আবারও রক্ত দিতে বলেন। এ সময় কেউ ঠিকমতো গুরুত্ব দেইনি বলে অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা। এরপর তাকে শহরের ইউরো মেডিকেল কনসালটেশন সেন্টারে চিকিৎসক জাহেদী হাসান রুমীকে দেখান। সেই চিকিৎসক শিশুটিকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে দেখানোর পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শেরে বাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
৬ জুলাই শিশুটিকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা সার্জারির মাধ্যমে ডান হাতের তিনটি আঙুল কেটে ফেলতে বলেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অনেক দেরি হওয়ার কারণে আঙুল কাটা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
জাহিদুল ইসলাম জানান, চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় তিনি পাবনায় চলে আসেন। এরপর গত ২৯ জুলাই পাবনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তাসিমের তিনটি আঙুল কেটে ফেলা হয়। আঙুল কেটে ফেলার পর থেকে স্বাভাবিক আচরণ করছে সে।
তিনি বলেন, আজ আপনার অবুঝ সন্তানের সঙ্গে এমন হলে আপনি কি করতেন? শুধু আমার শিশু সন্তান নয়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ-চিকিৎসক-নার্সদের এরকম অবহেলায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী দুর্ভোগ ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
তাসিমের মা বলেন, ডায়রিয়ার চিকিৎসা করাতে এসে আমার সন্তানের এক হাত হারিয়ে গেলো। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাহেদী হাসান রুমী বলেন, একদিন ওই শিশুকে নিয়ে তার বাবা আমার চেম্বারে এসেছিলেন। ততদিনে হাতে পচন ধরেছিল। আমি দেখেই বলেছিলাম আঙুল কেটে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। তখন শিশু বাচ্চা দেখে তারা ভয় পেয়েছিল। তাকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই।
এ বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন চিকিৎসক মনিসর চৌধুরী বলেন, জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে কোনও চিকিৎসক বা নার্সের অবহেলা জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।