সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। এরপর প্রেম। আর সেই প্রেমের টানেই তিন সন্তানকে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন এক বাংলাদেশি নারী। স্বপ্ন ছিল ভারতীয় ওই প্রেমিকের সাথে ঘর বাঁধবেন। সেই লক্ষ্যে প্রেমিকের বাসায় পৌঁছে যান ওই নারী। কিন্তু তখনো অজানা ছিল যে তার ভারতীয় প্রেমিক বিবাহিত। পরে যখন জানলেন প্রেমিক বিবাহিত, অগত্যা কিছুটা হতাশ হয়েই তিন সন্তানকে নিয়ে ফের দেশে ফিরে আসলেন ওই বাংলাদেশি প্রেমিকা।
রবিবার এ কথা জানিয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশ পুলিশ।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর প্রদেশের শ্রাবস্তী জেলায় যান তিন সন্তানের মা চট্টগ্রামের দিলরুবা শারমীন রুম্পা নামে ওই বাংলাদেশি নারী। অন্যদিকে শ্রাবস্তী জেলার মালহিপুর এলাকার ভরথা রোশনগড় গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী আব্দুল করিম পেশায় একজন শেফ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের একটি হোটেলের শেফ আব্দুল করিমের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় দিলরুবার।
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন মারা যান দিলরুবার স্বামী। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে অসহায়বোধ করছিলেন তিনি। আর্থিক সমস্যা পড়ে দিলরুবার পরিবার। এমন অবস্থায় বিউটিশিয়ানের কাজ শুরু করেন দিলরুবা। এরই মধ্যে করিমের সাথে পরিচয় হয় স্বামীহারা দিলরুবার।
সময় যত গড়ায় তাদের সম্পর্ক তত গাঢ় হয়। এরপর তারা দুজনেই বিয়ে করবেন বলেও স্থির করেন। আর সেই করিমের সাথে ঘর বাঁধবেন বলে তিন সন্তান- সানজিদা (১৫), মোহাম্মদ সাকিব (১২) ও মোহাম্মদ রাকিকেে (৭) নিয়ে টুরিস্ট ভিসায় উত্তরপ্রদেশের লখনউ পৌঁছন দিলরুবা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর যেদিন দিলরুবা বাংলাদেশ থেকে লখনউ পৌঁছান, একই দিনে লখনউতে অবতরণ করেন করিম। এরপর তারা পাঁচজন একটি বাসে বাহরাইচ পৌঁছয়। কিন্তু নিজের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর আগে করিম ওই চার বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি হোটেলে দুই দিন অবস্থান করেন।
জানা যায়, সামাজিক মাধ্যমে তাদের উভয়ের মধ্যে পরিচয় হওয়ার সময় করিম নিজেকে অবিবাহিত বলে জানিয়েছিলেন। যদিও দিলরুবা নিজের কোন পরিচয় গোপন করেননি। এদিকে হোটেলে ওই বাংলাদেশি নারীর সাথে দুদিন অবস্থানের পর করিম তাদেরকে নিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছান। বাড়িতে পৌঁছানোর পরে দিলরুবা জানতে পারেন করিম বিবাহিত এবং তার এক সন্তানও রয়েছে।
অন্যদিকে ওই বাংলাদেশি নারীকে দেখেই কার্যত মেজাজ হারান করিমের স্ত্রী। রীতিমতো চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন করিমের স্ত্রী। এক সময় উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে করিমের প্রতিবেশীরা সাথে সাথেই খবর দেয় স্থানীয় পুলিশকে। একইসঙ্গে খবর দেওয়া হয় ভারত-নেপাল সীমান্তে প্রহরারত সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) কর্মকর্তাদের।
পুরো ঘটনার সামনে আসার পর নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিও তৎপর হয়ে তদন্ত শুরু করে। এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে তিন সন্তানকে নিয়ে দিলরুবা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
মালহিপুরের ‘স্টেশন হাউজ অফিসার’ (এসএইচও) ধর্মেন্দ্র কুমার জানান, ওই বাংলাদেশি মহিলা ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে এসেছিলেন। তদন্তে এখনও পর্যন্ত কোন অপরাধমূলক কিছু পাওয়া যায়নি। তার ট্যুরিস্ট ভিসাও বৈধ ছিল।
শনিবার তিনি লখনউতে ফিরে আসেন এবং সেখানকার এক স্থানীয় এজেন্টের কাছ থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার টিকিট কেটে সম্ভবত সেখান থেকেই বাংলাদেশের উদ্দেশে চলে যান। করিমও বাহরাইনে ফিরে যাওয়ার কথা বলে চলে যান।
শ্রাবস্তী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার যাদব বলেন, ‘ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, সশাস্ত্র সীমা বল এবং অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াডের কর্মকর্তারা শর্মী এবং করিম- উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কিন্তু সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পায়নি।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, ‘বাংলাদেশি নারী নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে চলে যান।’