একটি শিশুর জম্মের মাঝে যেন আনন্দের বন্যা বইছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। আত্মীয় না হয়েও খুশিতে আত্মহারা হয়েছেন ডাক্তান নার্স সহ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। মুখে হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলায় ৬০লিটার করে অক্সিজেন নিয়েও প্রসব বেদনা ভুলে মা দেখানন ‘ভি’ সাইন। একেবারে মৃত্যুর দুয়ার থেকে জম্ম নেওয়া শিশুটির ভালো থাকাটাই যেন হাসপাতালের সকলের কাছে আনন্দের জোয়ার।
চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব – এর স্ত্রী ঝুমা আক্তার (২৩) দশমাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত মাকে ভর্তি করিয়ে সন্তান প্রসব করার এই রিস্ক নিতে রাজি হয় নি কোন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনেক হাসপাতাল ঘুরে ঝুমা আক্তার কে ২৮ জুন ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। কোভিড-১৯ আইসিইউ তে শুরু হয় তার চিকিৎসা।
শুরু হয় ঝুমার পেটের এই সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখাতে বিশাল চ্যালেন্ঞ্জ। চিৎসিকদের মাঝেও বিশাল চ্যালেন্ঞ্জ। রোগীর অবস্থা এত নাজুক যে সিজার করানোর ঝুঁকি নিতেও চাচ্ছিলেন না তারা। সিজার করানো পর বাচিঁয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছিলেন চিকিৎসকরা।
১জুলাই সন্ধায় ঝুমার প্রচন্ড প্রসব বেদনা শুরু হয়। হাসপাতালেে ডা. আফরা, ডা.মিতা, ডা. রিহুল, ডা.ইমরান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ রূপনা বড়ুয়া, সিনিয়র নার্স রোকেয়া, মিডওয়াইফ সেতু, আইরিন সালমা সহ সকলে আইসিইউতে ঝুমার সন্তান কে পৃথীবির আলো দেখাতে চেষ্টা শুরু করেন। সবাই চিন্তা আর উত্তেজনার মধ্যে সময় পাড় করছিল। রাত নয়টার দিকে সকল চিন্তা আর উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে ঝুমা আক্তার একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন।
এই শিশুটির জম্মের সাথে সাথে সবার বুকের উপর থেকে যেন পাথর সড়ে যায়। উৎসব আর আনন্দে মেঠে ওঠে ডাক্তার-নার্স সহ সকলেই।
ঝুমার ৬০লিটার করে অক্সিজেন চলছে। নাকে হাই ফ্লো ন্যাজল লাগিয়েও ঝুমা ‘ভি’ চিহ্ন দেখান।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার ফাহিম আলি হাসান জানান, রোগির অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। এমন একজন রোগীর সন্তান জম্মদেওয়াটা খুবই কঠিন কাজ ছিল। আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। এমন কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীর নরমাল ডেলিভারি ঘটনা মা ও শিশু হাসপাতালে প্রথম।
যদিও এর আগে আরেকজন মায়ের কোভিড পজেটিভ রোগির নরমালি ভূমিষ্ঠ করানো হয়েছিল। তবে এই রোগির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বড় আশ্চার্যের বিষয় ২ জুলাই ঝুমার জম্ম দেওয়া সেই কন্যা সন্তানের কোভিড পরিক্ষা হলে নেগেটিভ আসে। এমনটা নিশ্চিত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।