ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদার স্বপ্ন ছিল প্রেমিক মাহমুদুলের সঙ্গে বাঁধবেন ঘর। স্বপ্ন সত্যি করে মাহমুদুলও প্রেমিকার হাতে রেখেছিলেন হাত।
গত ৯ মার্চ উভয় পরিবারের সম্মতিতে হাসপাতালে হয় বিয়ে। কিন্তু ১২ দিন না পেরুতেই এলো দুঃসংবাদ। অবশেষ ক্যান্সারের কাছেই হেরে গেলেন ফাহমিদা।
সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে চট্রগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মেডিক্যাল সেন্টারের জেনারেল ম্যনেজার শাহ আলম ভূইঁয়া বলেন, সকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের ৪০৫ নম্বর কেবিনে ১ টাকা কাবিনে ফাহমিদার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়।
ফাহমিদার চাচা ইউসুফ আলম বলেন, ‘বিয়ের পর শুধু একদিন মেয়েটাকে বাসায় আনা হয়। ১৫ মার্চ ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেছে আমাদের মেয়ে।’
তিনি জানান, ফাহমিদার মরদেহ চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ায় নিজ বাড়িতে নেয়া হয়েছে। বিকেলে বাদ আসর তার জানাজা হবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্যানসার বাসা বাঁধে ফাহমিদার শরীরে। তারও কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম।
ফাহমিদার রেকটাম ক্যানসার ধরা পড়ার আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। পরের বছরই দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে ক্যানসার এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়।
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফাহমিদাকে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি ফাহমিদার। আশা ছেড়ে দেন সেখানকার চিকিৎসকরাও। এরপর কিছুদিন আবার এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তাকে চট্টগ্রামের ‘মেডিক্যাল সেন্টার’ নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জীবন-মৃত্যুর এত টানাপোড়েনেও ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি। প্রতিদিন কেবিনের সামনে এসে বসে থাকতেন। সামাজিক সম্পর্ক না থাকায় তার শয্যাপাশে গিয়ে সেবা করার সুযোগ ছিল না তার। এমন অবস্থায় ফাহমিদাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এতে কিছুতেই রাজি ছিল না ফাহমিদার পরিবার।
হার মানানো যায়নি মাহমুদুল হাসানকে। তার অনড় সিদ্ধান্তে অবশেষে দুই পরিবার তাদের বিয়ে দেয়।