আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এদিকে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গত রাত সাড়ে ৯টায় জানান, ‘এটি এখনো গভীর নিম্নচাপ হিসেবেই আছে। কাল সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।’
এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে উল্লেখ করে এটি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। গতকাল বুধবার আন্ত মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে মোখা। আমরা সব দিক থেকেই প্রস্তুত আছি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ড প্রস্তুত আছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার মধ্যে দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। আজও দেশজুড়ে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।
আজ অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
তিনি জানান, মোখার অগ্রভাগ ১৪ মে সকাল ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, এর পেছনের অংশ ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, মোখা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রটির সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা প্রবল। টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো এর গতিপথে পড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে : গতকাল সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আন্ত মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস), ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে এটি আঘাত হানতে পারে টেকনাফ ও মিয়ানমার উপকূলে। এটি হতে পারে সুপার সাইক্লোন। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেছি, এটা উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় এসওডি (স্থায়ী আদেশবালি) অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, আশ্রয়শিবির, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে তা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সেখানে এরই মধ্যে ১৪ টন শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ২০০ টন চাল চলে যাবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শেল্টার ম্যানেজমেন্টের জন্য।
প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস : ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলবর্তী জেলাগুলোর ১৪৯টি ফায়ার স্টেশন প্রস্তুত রয়েছে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্ক দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
বজ্রপাতে ৬ মৃত্যু : গতকাল দেশের কিছু কিছু জায়গায় কালবৈশাখী হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছি গ্রামে বিকেলে পাটক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তিনজন কৃষি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বজ্রপাতের সময় যমুনা নদীতে পড়ে সাদ্দাম হোসেন (৩৪) নামের এক মাঝি নিখোঁজ হয়েছেন।
আম কুড়াতে গিয়ে দুই বোনের মৃত্যু : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ঝড়ের সময় আম কুড়াতে গিয়ে গাছচাপায় দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাড়াটুঙ্গি মধ্যপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে জেরিন আক্তার (৬) ও আমিরুল ইসলামের মেয়ে মনি (৪)। তারা সম্পর্কে চাচাতো বোন।