ছয় জেলায় আজ বুধবার বজ্রপাতে চার কৃষক, চার কিশোরসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন শেরপুরের। বজ্রপাতে এসব জেলায় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।
শেরপুরে বুধবার দুপুরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এ সময় কয়েকজন কৃষক সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামের খেতে কাজ করছিলেন। আকস্মিক বজ্রপাতে ওই গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে চল্টু মিয়া (৪০) ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহত হন একই গ্রামের ফজু মিয়ার ছেলে বদু মিয়া (৩৫) ও জোছনা মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (৩৪)। স্থানীয় লোকজন আহত দুজনকে শেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবু সাঈদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে নকলা উপজেলার পৌর এলাকার লাভা গ্রামের খেতে কাজ করছিলেন কৃষক আজিজুল হক (৩৬)। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আজিজুল লাভা গ্রামের বদ্দি মিয়ার ছেলে। একই ঘটনায় মুক্তার মিয়ার ছেলে হুমায়ূন কবির (৩০) ও আবদুছ সালামের ছেলে বাবু মিয়া (২৮) আহত হন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
একই সময়ে বৃষ্টির মধ্যে শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর এলাকায় নানাবাড়ির রাস্তায় হাঁটছিল কিশোর আকরাম হোসেন (১৪)। আকস্মিক বজ্রপাতে সে ঘটনাস্থলে মারা যায়। আকরাম উপজেলার পাইকুড়া মালিঝিপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে।
এ ছাড়া শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইছামারী পাড়া গ্রামের একটি মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল কিশোর রাসেল মিয়া (১৪)। আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। রাসেল ওই গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে।
শেরপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। এসব ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে তাঁরা জানান।
স্থানীয় জোয়াড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ বলেন, জাহিদ হোসেন বাড়ির পাশের বিলের জমিতে বাবার সঙ্গে কাজ করছিলেন। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই জাহিদের মৃত্যু হয়। তবে তাঁর বাবার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর চর রৌহা গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া (৩০) বুধবার দুপুরে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে একই উপজেলার শিশুয়া গ্রামের দুই নারী বজ্রপাতে আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দুলাল মিয়া বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের খেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে দুলাল মিয়া গুরুতর আহত হন। পরিবারের লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে দুলাল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
একই সময়ে এই এলাকার শিশুয়া গ্রামের খোরশেদা বেগম (৩৫) ও ময়না বেগম (৩০) বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বজ্রপাতে এক কিশোর নিহত হয়েছে। তার নাম রবিন মিয়া (১৪)। সে উপজেলার উলুহাটি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। একই ঘটনায় দুলাল মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এর মধ্যে কিশোর রবিন ও দুলাল ফসলের মাঠ থেকে সড়কে ওঠে একটি সেতুর ওপর দাঁড়ায়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই রবিন মারা যায়। দুলাল মিয়া (৫০) গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে অন্য এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আশ্রবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশ্রবপুর গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া (১৬) বাড়ির পাশের বিলের খেতে আরও দুজনের সঙ্গে কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে রুবেল গুরুতর আহত হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম দেলোয়ার হোসেন (৩৮)। তিনি উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের নারিকেলি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফুলপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেলোয়ার বুধবার দুপুরে কৃষিজমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বজ্রপাতে প্রকাশ বিশ্বাস (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার জয়ডিহি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রকাশ বিশ্বাস উপজেলার মুণিজিলা গ্রামের বিনয় বিশ্বাসের ছেলে।
স্থানীয় কোদালিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মাছের ঘেরে কাজ করতে যান প্রকাশ বিশ্বাস। দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলেও তিনি কাজ করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ঘেরের ঘরে আশ্রয় নেন। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন প্রকাশ। তাঁকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বগুড়ার ধুনটে বজ্রপাতে সোহেল হোসেন (৩৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার থেউকান্দি গ্রামের মোজদার হোসেনের ছেলে।
সোহেল হোসেন গতকাল সকালে গ্রামের পাশের খেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্থানীয় লোকজন পাশের বিলে মাছ ধরতে গিয়ে সোহেলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা লাশটি বাড়িতে নিয়ে যান।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সোহেল হোসেনের পরিবারের অভিযোগ নেই। ফলে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।