এক লঘুচাপের প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আরেকটি সুস্পষ্ট লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটি আরো শক্তি সঞ্চার করেছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলীয় এলাকায় জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে চার বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিও অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
বুধবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টায় আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে ও গভীর সঞ্চালনশীল (বজ্রমেঘ) মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
ভারি বর্ষণের সতর্কবাণীতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্কবাণীতে জানানো হয়েছে।
এদিকে লঘুচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোন কোন জায়গায় অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে, সেখানে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে ১১৫, কুতুবদিয়ায় ১২৫, মোংলায় ১৫৫, পটুয়াখালীতে ২৫২, খেপুপাড়ায় ২৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে হিসেবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘স্থলভাগে উঠে আসায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আর শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়া সম্ভাবনা নেই। এটি আগামীকালকের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে যেতে পারে। এর প্রভাবে আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি থাকবে।’
‘সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত আজকেও বহাল রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে আজও অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে’ বলেন মনোয়ার হোসেন।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে- রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে।এ সময়ে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে, ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এটা রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয়।