রংপুরে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত। গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিম শীতল বাতাস। কুয়াশাচ্ছন্ন দিন গড়িয়ে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডা বাড়তে থাকে। উষ্ণতা পেতে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষের শরীরে উঠছে মোটা কাপড়। আগুন জ্বালিয়েও শীত নিবারণ করতে দেখা যাচ্ছে নিম্নবিত্তদের।
অন্যদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুরের হাসপাতালগুলোতেও ওয়ার্ডে বাড়ছে শীতজনিত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। ডিসেম্বরের শুরু থেকে এই অঞ্চলে কয়েকটি শৈত্য প্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকালে জেলার পীরগাছা উপজেলার কিছু এলাকায় তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। আবার নগরীর শাপলা এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে কাজের সন্ধানে জুবুথুবুভাবে বসে থাকতেও দেখা গেছে অনেক কৃষি শ্রমিককে।
রংপুর নগরীসহ কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে তীব্র শীতে দুর্ভোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার ইসমাইল হোসেন বলেন, শীতের মধ্য সময় না আসতেই যে তীব্রতা দেখছি তাতে আমাদের গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা খুব খারাপ হতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রংপুরে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে। এখানে মঙ্গলবারের তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো।
শীতে রংপুরের হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও অ্যাজমাসহ শীতজনিত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতালগুলোর বেশির ভাগ ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাই বেশি।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে সেখানে শীতজনিত রোগে প্রায় ১৩শ শিশু ও বয়স্ক রোগী ভর্তি হয়েছে।
রমেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে তিন বছরের শিশু কন্যার চিকিৎসা নিতে আসা নগরীর তাজহাট এলাকার উর্মি বেগম বলেন, ‘মেয়েটার চার পাঁচ দিন ধরে সর্দি আর কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন ঠাণ্ডার কারণে এই অবস্থা হয়েছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এসএম নুরুন্নবী বলেন, উত্তরাঞ্চল শীতপ্রবণ হওয়ায় এই সময়ে শীতজনিত রোগের প্রকোপ অনেকটা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে শিশু ও বয়স্কদের উপর। তাই রোগ প্রতিরোধে শিশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি গরম কাপড় ও উষ্ণতার পরামর্শ দেন তিনি।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাস উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা কমে শৈত্যপ্রবাহ বাড়বে। এছাড়াও এখন থেকে দিন দিন এই তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। এতে করে রংপুরের আশপাশের এলাকাগুলোতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।