শেকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’র শেকড় এতোটাই সমৃদ্ধ যে, ‘রাজা যায় রাজা আসে’ বিটিভির সর্বাধিক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হিসেবে জেগে রয় এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি। ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের প্রথম পর্ব নিয়ে বিটিভি পর্দায় হাজির হচ্ছেন হানিফ সংকেত। যে পর্বটির সেট ফেলা হয়েছিলো প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সীমান্ত কন্যা শেরপুরে।
শুটিং মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন মধুটিলা ইকোপার্কে। সীমান্তবর্তী এই পার্কে সবুজের সমারোহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দিয়ে মোড়ানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের ‘ইত্যাদি’। অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্ব ধারণ করা হয় জুলাই মাসের শুরুর দিকে, মানে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। যার প্রচার হবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তথা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে!
অনুষ্ঠান কর্তা হানিফ সংকেত জানান, এবারের অনুষ্ঠানে শেরপুরের পালাগানের শিল্পী তারা বয়াতী এবং পান্থ কানাই একটি ভিন্নরকম লোকসংগীত পরিবেশন করেছেন। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল। এছাড়াও শেরপুরকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন শেরপুরেরই স্থানীয় শতাধিক বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন কমল কান্তি পাল, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজীব ও তানজিনা রুমা। দুটো গানেরই সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।
দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান শেরপুরকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অনিমেষ রায়।
শেকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি প্রতিবেদন। রয়েছে শেরপুরের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। শেরপুরের বিভিন্ন দর্শনীয়, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও প্রত্নসম্পদের ওপর প্রতিবেদন ছাড়াও এখানকার জিআই পণ্য তুলসীমালা চাল ও ধান গবেষক চাটকিয়া গ্রামের কৃষক সেন্টু কুমার হাজং-এর ওপর রয়েছে একটি প্রতিবেদন। সহিদুল ইসলামের এক অপ্রচলিত শখের দুর্লভ সংগ্রহের ওপর রয়েছে প্রতিবেদন।
শেরপুরে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে ‘ইত্যাদি’র এবারের পর্বে রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে চীনের রাজধানী বেইজিং-এ অবস্থিত দেশটির কেন্দ্রীয় টেলিভিশন ভবন, চায়না টাওয়ার এবং বিশ্বের মহাবিস্ময় মহাপ্রাচীরের ওপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন।
এছাড়াও শেরপুরের মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। এবারও রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের ওপর সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু নাট্যাংশ। এতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন- সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান কিসলু, সুভাশিষ ভৌমিক, মাসুম বাশার, জিল্লুর রহমান, শবনম পারভীন, আঞ্জুমান আরা বকুল, আমিন আজাদ, মুকিত জাকারিয়া, আনন্দ খালেদ, তারিক স্বপন, জামিল হোসেন, জাহিদ শিকদার, সাদিয়া তানজিন, আনোয়ারুল আলম সজল, বেলাল আহমেদ মুরাদ, সঞ্জীব আহমেদ, সিয়াম নাসির, নিপু, কামাল বায়েজিদ, সাবরিনা নিসা, নাদিয়া হক, সুর্বনা মজুমদার, মতিউর রহমান, আনোয়ার শাহী, বিনয় ভদ্র, বিলু বড়ুয়া, সুজাত শিমুল, তাসনোভা নিঝুমসহ অনেকে।
এবারও ‘ইত্যাদি’র শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।
‘ইত্যাদি’র এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার হবে ৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশন জানায়, এই পর্বটি প্রচার তারিখ ছিলো গত ২৬ জুলাই, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে পর্বটি প্রচার হয়নি তখন। তবে বরাবরই নির্দলীয় অনুষ্ঠান হিসেবে বিটিভি পর্দায় সমাদৃত ‘ইত্যাদি’। তাই নতুন বাংলাদেশেও অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে কোনও বাধা নেই বলে জানা গেছে বিটিভি তরফে।
‘ইত্যাদি’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।