English

23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

ইসলামে পর্যটন ও ভ্রমন

- Advertisements -

ভ্রমন পছন্দ করেনা এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মুলত আরবি ‘রিহলাহ’ ও ‘সাইর’ শব্দের অর্থ ভ্রমন বা সফর। যেমন বলা হয়- গাদান রিহলাতুনা যার অর্থ আগামিকাল আমাদের ভ্রমন। আর সাইর অর্থ সফর করা বা স্থান ত্যাগ করা। পবিত্র কোরআনে সাইর শব্দটি ভ্রমন অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সুরা নামলের ৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন হে রাসুল, আপনি (মানুষকে) বলুন- তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন (সাইর) করে দেখ। এ থেকে বোঝা যায় ভ্রমন করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট বা বিষয়। শুধু মুনুষই নয়, পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরে সব কিছুই ভ্রমনরত আছে। চন্দ্র সুর্য, গ্রহ নক্ষত্র, পাখিকুলসহ সবই সদা সর্বদা ঘুরছে।

মানুষ পৃথিবীতে ব্যাক্তিগত ও পেশাগত কর্মব্যাস্ততা, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মনের মৌন ও শারিরিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পার্থিব জীবনের নানা দুঃখ কষ্ট, মানসিক অশান্তি, কর্মের এক ঘেয়েমি জীবনে ক্ষনিকের বিশ্রাম কে না পেতে চায়? মনের ব্যকুলতা খুজে পেতে চায় ভিন্ন এক জগৎ। যেখানে আছে প্রকৃতির অপরূপ সাজ, পাখপাখালির কলরব, বিশাল নদী, দু পারে সবুজের সমারোহে ভরা প্রকৃতি যেন চোখ জুড়ানো মন ভুলানো মনোরম পরিবেশ।

বিষয়টি আমরা অনুধাবন করি আর না-ই করি, আমাদের মন ঠিকই জীবনের কর্ম ব্যাস্ততার মাঝে মুক্তবৃহঙ্গের মত হারিয়ে যেতে চায় দুরে কথাও। নিজ গন্ডি পেরিয়ে ভ্রমনে যেয়ে প্রকৃতি, ইতিহাস সম্বলিত পুরনো স্থাপত্য ঘুরে দেখা মোটেও দোষণীয় নয়।

ভ্রমনের গুরুত্ব বোঝাতে ইসলামেন পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা রয়েছে তেমনি পার্থিব জীবনে ভ্রমন বা পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব বোঝাতে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় বগুড়া ট্যুরিষ্ট ক্লাব, শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদি সংগঠন (তীর) সহ দেশ বিদেশে নানা ধরনের সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যুরিষ্ট গাইড এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ট্যুরিজম ডেভলোপার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, ট্যুর অপারেটর্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, ট্রাভেল এজেন্সিসহ রয়েছে অসংখ্য প্লাটফর্ম। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ট্যুরিষ্টদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা দানের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আলাদা ইউনিট ( ট্যুরিষ্ট পুলিশ)।

বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ সুনানে আবু দাউদসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায় রাসুল সাঃ মরুভূমির বিভিন্ন প্রান্ত ভ্রমনে বের হতেন। সাহাবী রাঃ গনও বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে বের হতেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়। মানব সভ্যতায় ভ্রমনের ইতিহাস অতি প্রাচিন। হযরত আদম আঃ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ভ্রমনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আদম আঃ ও তার স্ত্রীর জান্নাত থেকে বের হওয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে নির্দিষ্ট সময়ে আরাফাতের ময়দানে দুজনের একত্রিত হওয়ার ঘটনা ভ্রমন ইতিহাসের প্রাথমিক রূপ হিসেবে গন্য।

আদি থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য সকল নবী রাসুল গন, সাহাবি গন, সত্য প্রচারক, পন্ডিত, কবি সাহিত্যিক পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মুসা আঃ জ্ঞান অন্বেষনের জন্য ভ্রমনে বের হয়েছিলেন। রাসুল সাঃ ভ্রমনের জন্য মানুষকে উৎসাহ দিয়েছেন। হাদিস গ্রন্থ সানানে আবু দাউদে এসেছে আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেন- যখন তিন ব্যাক্তি সফরে বের হবে তখন যেন একজনকে নেতা আমির বানিয়ে নেয়।

পর্যটন শিল্প, দর্শনীয় স্থান, মুসলিম স্থাপত্য, ভ্রমন সাহিত্য, ইতিহাস এগুলো একটি চমকপ্রদ বিষয়। মুসলিমদের মধ্যে সায়রাফী, ইবনে বতুতা, আল বেরুনিসহ আরবের হিরোডটাস নামে খ্যাত আল মাসউদি বিখ্যাত পর্যটক ও ভ্রমন ইতিহাসবিদ হিসেবে বিশ্ব নন্দিত। ঐতিহাসিক ভাবে জানা যায় যুগে যুগে মুসলিম মনীষীগন আত্মিক প্রশান্তি ও জ্ঞান অন্বেষনে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করেছেন। পর্যটন স্পট, প্রকৃতির অপরূপ পরিবেশ ও প্রাচীন স্থাপত্য ভ্রমনের মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি ও মানসিক অবস্থার পরির্তন, দেশের বিভিন্ন স্থান ও নানা মানুষের জীবনমান সম্পর্কে জানা, প্রান্ত থেকে প্রান্তরের ভাষাগত ধারনা পাওয়া যায়।

পর্যটন স্পট বা দর্শনীয় স্থান ভ্রমনে আল্লাহ সয়ং উৎসাহ দিয়েছেন। যেমনটি সুরা আয-যারিয়াতেরর ২০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- সুনিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য জমিনে অনেক নিদর্শন রয়েছে। অন্যত্র সূরা কাফের ৬ থেকে ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- তারা কি (মানব) তাদের উপরে আসমানের দিকে তাকায় না? কিভাবে আমি আকাশ কে বানিয়েছি, সুশোভিত করছি, আর তাতে কোন ফাটল নেই। আর আমি জমিন কে বিস্তৃত করেছি, পর্বতমালা স্থাপন করেছি, বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মায়াছি প্রতিটি বান্দার জ্ঞান ও উপদেশ হিসেবে। ভ্রমন সম্পর্কে সুরা আনকাবুতের ২০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- হে রাসুল আপনি বলুন তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন কর এবং দেখ, তিনি কিভাবে সৃষ্টি কর্ম শুরু করছেন। অতপর পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু করতে সক্ষম। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সূরা আল আনআমের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন করে দেখ মিথ্যাচারীদের পরিনতি কেমন হয়েছে?

বিভিন্ন স্থান, দেশ বা পর্যটন স্পট ভ্রমনে ভাষাগত পরিচিতর উন্মেষ ঘটে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা রূমের ২২ নং আয়াতে বলেন- নিদর্শন সমুহের মধ্যে রয়েছে আসমান সমুহ, পৃথিবী সৃষ্টি ও তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানি ব্যাক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। পর্যটন স্পট, প্রাচীন স্থাপত্য ভ্রমনে মানব অন্তরে বোধ শক্তির উদয় ও উন্নতি ঘটে।

আল্লাহ কোরআনে সুরা নাহলের ১২ নং আয়াতে বলেন- তিনি তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রী, দিন, সুর্য ও চন্দ্রকে। তারকা সমুহ তারই বিধানের কর্মে নিয়োজিত নয়েছে নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্নদের জন্য নিদর্শনাবলী। আল্লাহ ভ্রমন কে সহজ করতে বিধান কেও সহজ করেছেন যেমন সুরা নিসার ১০১ নং আয়াতে বলেন- তোমরা যখন দেশ বিদেশে সফর বাভ্রমন করবে তখন নামাজ সংক্ষিপ্ত (কছর) করলে কোন দোষ নেই। আর অবিশ্বাসীগন তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।

(কারিমুল হাসান লিখন)
ধুনট, বগুড়া।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন