নাসিম রুমি: দীঘা আমি সর্ব প্রথম ভ্রমনে যাই ২০১২ সালে। তখন দীঘার পরিবেশ আমাকে আকৃষ্ঠ করতে পারেনি। কোন নির্জনতা ছিলনা। উপচে পড়া মানুষের ভীর। এখনো তেমন কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে আগের চেয়ে পরিবেশ কিছুটা উন্নত। সৈকতের কাছে শত-শত অভিজাত হোটেলগুলো দীঘার সৌন্দর্য্যকে বৃদ্ধি করেছে। এখন যাতায়াতও খুব সুবিধা। কলকাতার হাওড়া ষ্টেশন থেকে মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে দুরান্ত ট্রেনে চেপে দীঘায় যাওয়া সম্ভব। অতীতে দীঘায় যাওয়ার বাহন ছিল বাস ও প্রাইভেট কার। সময় লাগতো সাত ঘন্টা।
দীঘার আশে পাশে আরও একাধিক সমুদ্র সৈকত রয়েছে। এদের মাঝে উদয়পুর, তালসারি, তাজপুর, শঙ্করপুর সৈকত এবং মান্দারমানি সি-বিচ অন্যতম। বিশেষ করে মান্দারমানি ও তাজপুর সৈকতে নির্জনতা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ঠ করে। গত বছরে আমি একাধিকবার দীঘা, তাজপুর ও মান্দারমানি ভ্রমন করেছিলাম। সেই সুযোগে দীঘার আশেপাশের একাধিক নির্জন সৈকত গুলিও ভ্রমন করি। দীঘার আশে পাশের সি-বিচগুলোর মধ্যে মান্দারমানি ও তাজপুর সৈকত আমাকে অধিক মুগ্ধ করেছিল। এই দুইটি সি-বিচ খুবই নির্জন বিশেষ করে তাজপুর সি-বিচটি। গত ১৭ জানুয়ারী দুপুর আড়াইটার ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ বিমানে চেপে কলকাতার পথে রওয়ানা হই।
দীঘা ও মান্দারমানিতে ভ্রমনের উদ্দেশে আমার সফরসঙ্গী ছিলেন কেরানীগঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব সারোয়ার হোসেন। গত বছর আমি যখন দার্জিলিং ভ্রমন করি তখনও এই সারোয়ার ভাই আমার সফরসঙ্গী হন। তিনি অত্যান্ত চমৎকার একজন মানুষ। সর্বদা ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে চলেন। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে তিনি খুবই সচেতন থাকেন। ভ্রমনের একজন ভাল সঙ্গী আমি দীর্ঘ বছর যাবত খুজঁতে ছিলাম। অতপর সারোয়ার ভাইকে পেলাম। তিনিও আমার মত ভ্রমন প্রিয় একজন মানুষ। তবে ব্যস্ততার কারনে বিদেশে তার এক সপ্তাহের অধিক থাকা সম্ভব হয়না।
১৭ জানুয়ারী ২০১৭কলকাতায় পৌঁছে ট্রেভেল এজেন্সীর মাধ্যমে দীঘাগামী ট্রেনের যাওয়া-আসার কনফর্ম টিকেট ক্রয় করলাম। ১৮ জানুয়ারী সকাল ১১.৩০ মি: দূরন্ত ট্রেনে চেপে দীঘার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মাত্র দুই ঘন্টা ৪৫ মিনিটে পর দীঘা ষ্টেশন নেমে প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে মান্দারমানি সি-বিচের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ৫০ মিনিটের মধ্যেই মান্দারমানিতে পৌছে বেলাভূমি রিসোটে অবস্থান করলাম। রির্সোট থেকেই মান্দারমানির নির্জন সৈকত দেখা যাচ্ছে। কক্ষে জিনিসপত্র রেখেই সমুদ্রে যাবার প্রস্ততি নেই। রির্সোট থেকে নেমেই সাগরবেলা।
জোয়ারের জলে এসে ভিজিয়ে দেয় ফটক পর্যন্ত। আবার ভাটার টানে সমুদ্র সামান্য পিছিয়ে গেলে সেটাই যাতায়াতের পথ হয়ে যায়, এখানকার যানবাহনের। ভাটার সময় মান্দারমানি সৈকত দিয়ে চলে আসলাম আরও চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত “রোজভেলি বিলাসবহুল হোটেলের কাছে।
সেখানে একটি মন্দীরের কারুকাজ আমাদের ভীষন ভাবে মুগ্ধ করলো। সমুদ্র তখন তেমন টেউ নেই, বললেই চলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো এবার আমরা সৈকত ছেড়ে কটেজ কক্ষে এসে বিশ্রাম নিলাম। রাতে ডিনার শেষে ক্লান্ত শরীর যখন বিছানায় মাথা রাখলাম এক নিমেষেই নিদ্রায় চলে গেলাম। সারোয়ার ভাইও তাই।
পরের দিন সকালে উঠে দেখি জোয়ার চলে এসেছে সমুদ্রের ঢেউ গতকালের মত শান্ত নয়, আজকে বেলাভূমি রির্সোট ছেড়ে লিভসিভেলী রির্সোটের ১০৮ নং কক্ষে ল্যাগেজ রেখে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শঙ্করপুর সৈকতে সকালে এগারোটার দিকে রওয়ানা দিয়ে ১২টার মধ্যেই শঙ্করপুর সৈকতে ঘন্টা দু’য়েক থেকে পুনরায় চলে আসলাম মন্দারমানি সৈকতে। শঙ্করপুর সি-বিচে নির্জনতা আছে তা সত্য।
কিন্তু পর্যটকদের মুগ্ধ করার পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। ইতি পূর্বে আরও দুইবার আমি শঙ্করপুর বিচে ভ্রমন করেছিলেম। সমুদ্রের টাটকা। ভাজা মাছ আমাদের ক্ষুধাকে নিবারন করলো। মন্দারমানির সৈকতের শেষ প্রান্তে যেখানে মোহনা নদী এসে সমুদ্রের সঙ্গে মিশেছে। পরন্ত বিকালে মন্দারমানির সৈকতের এই রূপ আমাদের মুগ্ধ করলো। বিরামহীন ভাবে আমরা ছবি তোললাম। রাতে কটেজের বারান্দা থেকে সমুদের গর্জন শোনতে পেলাম। আরও একটু এগিয়ে এসে সমুদ্রের সঙ্গী হলাম দু’জনে।
সৈকতের দিকে যখনই আমি দৃষ্টি রাখি, তখনই ক্ষণিকের জন্য হলেও সুখ খুঁজে পাই। তাই সমুদ্র আমাকে বারে-বারে হাত ছানি দেয় পরের দিন সকালে আমাদের দীঘাতে ফিরে যাওয়ার কখা তাই মন্দারমানির ছাড়ার আগে সকালে পুনরায় সৈকতের কাছে এসে বসলাম। খাণিক মুক্ত, খাণিক হারিয়ে যাওয়া। হাতের নাগালে আদিগন্ত সারবেলা আর মন্দারমনির অপরিসীম নির্জনতা……..। যদি সমুদ্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে চান, তা হলে মন্দারমনির নির্জন বেলাভূমিতে আসতেই হবে। আর যদি হৈচৈ পছন্দ করেন, তাহলে দীঘাই আপনার পছন্দের সৈকত হবে।
আজ ২০ জানুয়ারী ২০১৭ সাল। দীঘাতে এসে নিউ ওয়ান এন ওয়ানলি হোটেলে অবস্থান করলাম। সত্যিই এই হোটেলটি চমৎকার ও পরিছন্ন। সৈকতের অতি নিকটে বলে পর্যটকরা এই হোটেলেই অবস্থান করতে অধিক স্বাছন্দবোধ করেন। নিউ ওয়ান এন ওয়ানলি হোটেলটির অবস্থান নিউ দীঘাতে। এর পাশেই রয়েছে রাজিত হোটেল। নটাও উন্নত মানের অভিজাত হোটেল। সকালে দীঘাতে অবস্থান করে প্রথমে চলে গেলাম অমরাবতি উদ্যানে। সত্যিই চমৎকার। ফুলে-ফুলে ভরা এই উদ্যানটি। লেকে বোটিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। ছোট হলেও জাপানের আদলে এই উদ্যানটি পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই। এর পর একটি গাড়ী ভাড়া করে চলে আসলাম তালসারি সৈকতে, অতপর উদয়পুর সৈকতে।
২টি সৈকতে নির্জনতা আছে। উদয়পুর সৈকতে টাটকা সমুদ্রে মাছ সাবার করতে যেমনটি সাধ তেমনি আনন্দও পাওয়া যায়। কিছু পর্যটক উদয়পুর সমুদ্র সৈকতে তীরে বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে সমুদ্রের গভীরতার দিকে তাকিয়ে উপভোগ করছেন আর তখন আমি আর সারোয়ার ভাই সমুদ্রের টাটকা মাছ খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করছি। সারোয়ার ভাই হাজী মানুষ তাই মাতালদের তিনি এরিয়ে চলেন তাই দীর্ঘ সময় সৈকতে থাকার সম্ভব হয়নি অনেকেই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো অতপর সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে এসে বিশ্রাম নিয়ে। রাতে দীঘার জোয়ারে উত্তাল টেউ এর সঙ্গে কিছু সময় অতিবাহিত করে হোটেলে ফিরে, এসে ডিনার পর্ব শেষ করে নিদ্রার মাঝে হারিয়ে গেলাম। পরের দিন কলকাতার উদ্দেশে দীঘাকে বিদায় জানিয়ে ট্রেনে অবস্থান করলাম। আমার আরও একটি দিন দীঘাতে থাকার বাসনা ছিল।