English

17 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ

- Advertisements -

নাসিম রুমি: যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর রূপ ছাড়াও বিমোহিত করবে পদ্মমুখ, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর, বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ঝর্ণা।

বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত
দুর্গম পাহাড়ের ঝর্ণাধারা কঠিন ও কমনীয়তার এক অকৃত্রিম মিথস্ক্রিয়া। এমন নৈসর্গিক দর্শন নিমেষেই ভোলাতে পারে যেকোনো পাহাড়চারীর মন। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকার সময় প্রস্রবণগুলো গুনতে গিয়ে খেই হারাতে হয় এর মোহনীয়তার কারণে। বান্দরবানের নাফাখুম দেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাতগুলোর তালিকায় নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কতটুকু রোমাঞ্চের পর দেখা পাওয়া যায় এই অমিয়ধারার।

নাফাখুম ঝর্ণার নামকরণ
এই ঝর্ণার নামকরণের কথা বলতে হলে প্রথমেই বলতে হবে রেমাক্রি নদীর কথা। এই নদীতে “নাফা” নামে এক ধরনের মাছ আছে, যেটি সবসময় স্রোতের বিপরীত দিকে চলে। এভাবে চলতে যেয়ে মাছগুলো লাফিয়ে ঝর্ণা পার হওয়ার চেষ্টা করে। তখন এদের কাপড় বা জালে আটকে ফেলেন স্থানীয়রা।

আদিবাসীদের বসতবাড়িগুলো দেখা যায় সবুজে ঘেরা পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। পাহাড়ের ঢালে টিন আর বেড়া দেওয়া ঘরগুলোকে মারমা ভাষায় “খুম” বলা হয়, যার অর্থ “জলপ্রপাত”। আর এভাবেই নাফা আর খুম শব্দ দু’টি মিলে ঝর্ণার নাম হয়েছে “নাফাখুম”।

নাফাখুম জলপ্রপাতের অবস্থান
জলপ্রপাতের জায়গাটি পড়েছে বান্দরবান জেলার অন্তর্গত থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে। থানচি বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরে।

থানচি বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী, যেটি রেমাক্রি থেকে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে গেছে। নদীপথে কিছুদূর পর পর ১ থেকে ২ ফুট; এমন কি কোনো কোনো জায়গায় ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্তও ঢালু। এই পথে নৌকা বেয়ে উপরে ওঠার সময় দু’পাশের সবুজে মোড়ানো উঁচু পাহাড়গুলো চোখে পড়ে। এগুলোর কোনো কোনোটা এতটাই উঁচু যে, দেখে মনে হয় সেগুলোর চূড়া হারিয়ে গেছে মেঘের উপরে।

নাফাখুম ঝর্ণা দেখার সঠিক সময়
এখানে জলপ্রপাতকে ঘিরে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে বর্ষার বৃষ্টিতে অধিকাংশ সময় সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে আসে। তাই প্রশাসন থেকেই নাফাখুম ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

নাফাখুম বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষার ঠিক পর থেকে শীতকালের আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের যেকোনো সময়কে বেছে নেওয়া যেতে পারে। একদম কনকনে শীতের সময় ঝর্ণার পানি সব শুকিয়ে যায়। কিন্তু তাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কোনো ঘাটতি পড়ে না।

নাফাখুম ভ্রমণে যা দেখতে পাবেন
রেমাক্রি খালের পানি নাফাখুমে এসে বাক নিয়ে নেমে গেছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে। আর এতেই জন্ম নিয়েছে প্রাকৃতিক এই জলপ্রপাত। প্রচণ্ড গতির এই প্রস্রবণে জলীয় বাষ্পে প্রায়ই সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে রংধনু। এছাড়াও ভীষণ ভাবে আছড়ে পড়া পানি ঝর্নার চারিদিকে সৃষ্টি করে ঘন কুয়াশা। উড়ে যাওয়া বা ছিটকে পড়া পানি বাষ্পে ভেসে এসে শরীরে স্পর্শ করে। ঠিক কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মতো। আর এই কারণেই নাফাখুমকে বাংলার নায়াগ্রা বলা হয়ে থাকে।

এই ভ্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা যাবে নীলগিরি, চিম্বুক, সাঙ্গু নদী, মিলনছড়ি, পদ্মমুখ, রেমাক্রি ঝর্ণা, তিন্দু, বিজিবি ক্যাম্প, বড় বা রাজাপাথর, ও মারমা পাড়া।

নাফাখুম যাওয়ার উপায়
ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এগুলোর মধ্যে ননএসিগুলোর ভাড়া জনপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এসিগুলো জনপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,৬০০ টাকা ভাড়া নেয়।

ট্রেনে যেতে হলে ঢাকা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে। শ্রেণিভেদে ট্রেনের ভাড়া পড়বে ৩৪৫ থেকে শুরু করে ১,২২৯ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম পৌঁছে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে বান্দরবানের বাস ধরতে হবে। বাস ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা করে নিতে পারে। এছাড়া দামপাড়া বাস স্টেশন থেকেও বান্দরবানের বাস ছাড়ে।

চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি রিজার্ভ নিয়েও বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা হওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গুনতে হবে ২,৫০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন