নাসিম রুমি: ভ্রমণের কথা চিন্তা করতেই মনের মধ্যে একটা গভীর সুখ অনুভব হয়। ভ্রমণ আমাদের ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে আবারও কোনো এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তোলে। মনকে সতেজ করে তুলতে চাইলে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে ঘুরে আসতে পারেন। সবুজে মোড়ানো মেঘালয় পাহাড় ঘিরে রেখেছে মেঘ, পাদদেশ ছুঁয়ে বহমান স্বচ্ছ শীতল জলরাশি। উঁচু-নিচু ঢেউ এসে খেলছে ধলাই নদের বুকে।
ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, এপারে বাংলাদেশের সাদা পাথরের রাজ্য। পাঁচ একর জমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই সাদা পাথর। ছোট, মাঝারি, বোল্ডার আকৃতির পাথর। সাদার মধ্যে নিকষ কালো পাথরও আছে। কোনোটি খয়েরি। যেন এলাকাজুড়ে পাথরের বিছানা। পাথর মাড়িয়ে ঝরনার আবাহন। কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর পানি। কোথাও তারও অনেক বেশি। পাথরের ওপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে।
এ ছাড়া নদের বুকে পাহাড়ি ঝরনার স্নিগ্ধ জলরাশি পর্যটকদের বেশ আকর্ষণ করে। অক্সিজেন টিউব ব্যবহার করে অনেকেই ভাসেন ধলাইয়ের বুকে। জীবনকে খানিকটা চাঙা করতে অনেকেই ডুব দেন ধলাইয়ের শীতল জলরাশিতে। পাথরের বাঁকে বাঁকে অক্সিজেন টিউব দিয়ে অনেকেই সাঁতরে পার হন ধলাইয়ের বুক। এ এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! কী ঠান্ডা পানি, কী স্বচ্ছ! দেখে মনে হবে, ফিল্টারিং করা! নদের পানিতে নামতে হলে আপনার জিনিসপত্র রাখার জন্য এখানে সুব্যবস্থা রয়েছে। সামান্য খরচে জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে নিতে পারেন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ বাজারে যেতে হবে রিজার্ভ গাড়িতে। কম মানুষ হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেওয়া ভালো। দল বড় থাকলে লেগুনা বেছে নেন অনেকে। ১০ জন বসা যায় এমন লেগুনার ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে সাদা পাথর যাওয়ার নদীপথের দূরত্ব মাত্র ৭ মিনিটের। আটজন চড়া যায় এমন নৌকার ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর ভোলাগঞ্জ থেকে উৎমা-ছড়া যাওয়ার পথে নদী পার হতে হবে। নদী পেরোলেই দয়ার বাজার। সেখান থেকে উৎমা-ছড়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া একেকজনের পড়বে ৩০ টাকা।
যেখানে খাবেন
ভোলাগঞ্জ বাজারে ভাত, মাছ ও দেশীয় খাবারের মতো মোটামুটি মানের কিছু হোটেল আছে। রওনা হওয়ার আগে সিলেট থেকে নাশতা করে নেবেন এবং ফিরে এসে সিলেটে রাতের খাবার খাবেন। আর মধ্যে দুপুরের খাবার স্থানীয় হোটেল থেকে করে নেবেন।
যেখানে থাকবেন
সকালে রওনা হলে ভোলাগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট শহরে ফিরে আসতে পারবেন। রাতে থাকার জন্য সিলেট শহরে থাকাই ভালো হবে।
সতর্কতা
সাধারণত সাদা পাথর যেহেতু বাংলাদেশ-ভারতের একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল। সুতরাং কোনোভাবেই ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করা যাবে না। অন্যদিকে, নদের জলে গোসল করতে নামলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট বা অক্সিজেন টিউব ব্যবহার করতে হবে। তা ছাড়া পর্যটক হিসেবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোনোরকম চিপসের প্যাকেট বা আবজর্না সৃষ্ট কোনো বস্তু সেখানে ফেলছেন কি না। কারণ এসব পরিবেশদূষণ করবে এবং ওই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হলে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র সৌন্দর্য হারাবে।