নাসিম রুমি: যারা কলকাতার কাছের কোথাও বেড়াতে যেতে চান তাদের জন্য বকখালি জায়গাটি উপযুক্ত। এই জায়গাটি দীঘা পুরী সমুদ্র সৈকত থেকে অনেকটাই আলাদা
বকখালি তে সমুদ্র সৈকত ছাড়া আরো অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে ।নামখানা থেকে বকখালি যাওয়ার জন্য নতুন ব্রিজ তৈরি হয়েছে ।তাই এখন বকখালি যেতে হলে আপনাদের নদীর পেরিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই। বকখালি যাওয়ার সহজ উপায় হল ট্রেনে করে যাওয়া ।শিয়ালদা থেকে নামখানা আপনি ট্রেনে করে যেতে পারবেন ।তারপর ওখান থেকে বাস কিংবা টোটো তে করে আপনারা বকখালি পৌঁছাতে পারবেন। বকখালি সমুদ্র সৈকত শান্ত এবং নির্জন। জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে সমুদ্রের জল কখনো কাছে আবার কখনও দূরে সরে যায় ।সমুদ্রের জল শান্ত হওয়ার কারণে এখানে স্নান করে ততটা মজা পাবেন না। বকখালি তে থাকার জন্য আপনারা অনেক ছোট বড় লজ কিংবা হোটেল পেয়ে যাবেন।
বকখালি বাসস্ট্যান্ডের কাছের লজ গুলি খুবই সস্তা। আপনারা যদি চান তাহলে এই লোকগুলি তো থাকতে পারেন ।কিন্তু এখান থেকে সী বিচ একটু দূরে ।সী বিচে এলে আপনি দেখতে পাবেন সমুদ্রের জল অনেকটাই দূরে ।সমুদ্র পর্যন্ত আপনাকে যেতে হলে একটু হাঁটতে হবে এবং একটি ছোট্ট খাল বেরোতে হবে ।ভাটার সময় খালে গোড়ালি পর্যন্ত জল থাকে ।আর আপনি দেখতে পাবেন ওই জলে অসংখ্য ছোট ছোট মাছ খেলা করছে। সমুদ্রের পাড় থেকে দেখা যাবে অনেক ছোট বড় হোটেল এবং দোকানপাট। তাছাড়া রয়েছে সুন্দর ঝাউবন। বকখালির কাছে হেনরি আইল্যান্ড বলে কি সুন্দর জায়গা রয়েছে ।জায়গাটিতে রয়েছেন সুন্দর ম্যানগ্রোভ গাছের জঙ্গল। ওখানে যেতে হলে আপনারা টোটো ভাড়া করতে পারেন ।তাছাড়া নিজের গাড়ি থেকে থাকলে আরো ভালো। যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশ ।রাস্তার দুই ধারে রয়েছে ছোট বড় মাছের ভেড়ি। কিছুদূর যাওয়ার পরে রয়েছে হেনরি আইল্যান্ড ভ্রমণের টিকিট ঘর। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা এখানে রয়েছে সুন্দর কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এবং কমপ্লেক্স ।
রেস্টুরেন্ট এবং কমপ্লেক্স পেরিয়ে আপনারা চলে যেতে পারেন সী বিচে ।সমুদ্র সৈকত টি খুব শান্ত এবং নির্জন সমুদ্রের ধারে যেতে হলে একটি সুন্দর ম্যানগ্রোভ গাছের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। জঙ্গলের গাছগুলি রাস্তার দু দিক থেকে যেন একটি সেট তৈরি করেছে। যার কারণে জায়গাটা খুবই সুন্দর দেখায়। এরপর আপনারা চলে যেতে পারেন ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্য বন্দরে।
এখানে দেখতে পাবেন অনেক কয়েকটি লঞ্চ টলার শারি ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।এই লঞ্চ গুলি সমুদ্রে ধরা মাছ এখানে আনলোড করে ।ফ্রেজারগঞ্জ এর প্রধান আকর্ষণ হলো এখানকার বায়ু কল গুলি । সেগুলি এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এরপর আপনারা চলে যেতে পারেন কারগিল বিচ দেখতে। এখানে সমুদ্র সৈকতের ধারে দাঁড়ালে আপনি দেখতে পারবেন সমুদ্রের মাঝখানে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি ছোট বড় দ্বীপ।
সেগুলির মধ্যে জম্বু দ্বীপ এবং মৌসুমী দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। বকখালির কাছে একটি ছোট্ট মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরের নাম বনবিবির মন্দির । মন্দির খুবই সুন্দর এবং চারিদিকে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। বকখালি সমুদ্রসৈকতে রাতের মজা একটু আলাদা। চারিদিকে আপনি দেখতে পারবেন ছোট-বড় অনেক দোকানপাট। রাত্রেবেলা দোকানগুলিতে আলো জলে এবং সুন্দর সুন্দর খাবারের গন্ধে চারিদিক ভরে ওঠে।
আপনার এখানে অনেকগুলি সি ফুডের স্টল পেয়ে যাবেন। আপনারা খেতে চাইলে চোখের সামনে কেটে ভেজে দিয়ে থাকে ।বকখালি বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কুমির এবং অনেক হরিণ। চিড়িয়াখানা টি ম্যানগ্রোভ গাছের জঙ্গল এর মধ্যে অবস্থিত।
নাসিম রুমি– সাংবাদিক, লেখক ও পর্যটক।