জহিরুল ইসলাম মিশু: টানা দুইদিন কমার পর রবিবার আবার বাড়ছে সিলেটের সুরমা নদীর পানি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সকাল ৯ টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে সিলেট পয়েন্টে এ নদীর পানি অপরিবর্তিত আছে। অপরদিকে ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কুশিয়ারার পানি বাড়ায় বাঁধ ভেঙে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট অফিস বলছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আর খুব একটা অবনতি হওয়ার আশংকা নেই। ৪/৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে যাবে।
বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় বানভাসিদের সংকট আরও বেড়েছে। ত্রাণ নিয়ে হাহাকারও দেখা দিয়েছে অনেক জায়গায়। এখন পর্যন্ত ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে। এরমধ্যে শনিবার কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে কাড়াকাড়ি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
ত্রাণের কোন সংকট নেই জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মজিবর রহমান বলেন, শনিবার পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে ৩২৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ও সাড়ে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।এখনও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। বোরোর পর তলিয়ে গেছে আউশ ধানের বীজতলা। এছাড়া ভেসে গেছে হাজারও খামারের মাছ।
এদিকে আকস্মিক বন্যায় সিলেটের ১১টি উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘী, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। মাছ ভেসে যাওয়া ছাড়াও হয়েছে অবকাঠামোগত ক্ষতি।
সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিকের ২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি আরো জানান,জেলায় মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়। আর এ ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এবারের ভয়াবহ বন্যায় জকিগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৩৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ৬২২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২ হাজার ৫৯২টি খামার তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকা, কানাইঘাট উপজেলায় ২ হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ কোটি টাকা, বিশ্বনাথ উপজেলায় ২ হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা, জৈন্তাপুর উপজেলায় ২ হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬৭৪ কোটি টাকা ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি মাছের খামার, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৮৪৫টি, বালাগঞ্জ উপজেলায়,৭০টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়,১৪৫টি ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ২১০টি খামার তলিয়ে গেছে।
কয়েকদিন ধরে জমে থাকা বন্যার পানি আর ময়লা-আবর্জনা মিলেমিশে পচে গিয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ; সিলেট নগরীতে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর জন্য যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন দুর্ভোগ।
এদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে সিলেটে সিলেটে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে।সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহারিয়ার বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। চর্মরোগও বাড়ছে।পানি কমলে রোগবালাই আরও বাড়তে পারে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য আমরা এরইমধ্যে ১৪০ টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।