সিলেট নগরীর জল্লার পাড়ে জল্লারদিঘী সংলগ্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত ওয়াকওয়ের প্রায় পুরোটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আরমান হোসেনের রক্তে রঞ্জিত।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে আরমান হোসেন (১৭) নামের এক কিশোরকে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে সেখানে খুন করা হয়। শুক্রবার বিকেলে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে সিলেট নগরীর হযরত মানিকপীর (রঃ) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
ঘটনাস্হল সরেজমিন ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে নিহত আরমানকে ৫-৬ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ জল্লারপাড় পয়েন্ট থেকে ওই সময়ে ঢেকে এনে ওয়াকওয়ের ভেথরে নিয়ে আসার সাথে সাথে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার উপর হামলা চালায়। ছুরিকাঘাত ও হামলার সাথে সাথে আরমান হোসেন প্রাণে বাঁচার চেষ্টায় দক্ষিণ দিকে দৌড়াতে থাকে, এমতাবস্থায়ও খুনিরা ছুরি দিয়ে তার শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকলে একপর্যায়ে আরমান জল্লারপাড় ওয়াকওয়ের দক্ষিণ প্রান্তে ব্রীজের উপর ঝুলে পড়ে,তখন খুনিরা মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে পালিয়ে যায়। এসময় স্হানীয় কয়েকজন লোক তাকে গুরুতর জখম অবস্হায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এতে পুরো ওয়াকওয়ে যেনো আরমানের রক্তে রঞ্জিত হয়ে রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত আরমানের বাসায় গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।নিহতের পিতা-মাতা পুত্রের শোকে মাতম করে মাঠিতে লুটেপুটে পড়ে রুলকরে কাঁদছেন,তাদের কাঁন্না ও আহাজারি দেখে উপস্হিত কেহই কান্না থামাতে পারছেননা। তাদেরকে সান্তনা দেওয়ার যেনো কোন ভাষা কারো নেই। নিহত আরমানের পিতা আবুল কালম আজাদ ও মাতা জোসনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,স্বাধীনতার বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আমার নিরপরাধ ছেলে আরমানকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে।
তারা এঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানান। নিহত আরমান হোসেনের জন্ম নগরীর জল্লারপাড় এলাকায়, পরিবারের সাথে নগরীর জল্লার পাড় ও জামতলা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত ভাড়া বাসায় তারা বসবাস করে আসছেন। এলাকাবাসিও আরমানকে ভালো ছেলে হিসেবে আদর করতেন বলে জানান স্হানীয় লোকজন। নিহতের পিতা আবুল কালাম আজাদ ওই এলাকায় এসি’র ওয়ার্কশপ নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে। নিহতের দাদা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক আলী। নিহত আরমান হোসেন ময়মনসিংহের একটি স্কুলে পড়ালেখা করতেন। এরআগে সে সিলেট নগরীর জামেয়া ইসলামীয়া কাজির বাজার মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। করোনাকালীন সময়ে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার পরিবার আরমানের নানাবাড়ি ময়মনসিংহের একটি স্কুলে নিয়ে ভর্তি করান, সেখান থেকে এবার সে অষ্টম শ্রেণী পাস করেছে বলে জানান নিহতের পরিবার।
সে ভাই বোন ৩ জনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলো।আরমানের পিতা আবুল কালাম আজাদ জানান,বৃহস্পতিবার রাত অনুমান ১২টার দিকে তার ছেলে আরমান বাসা থেকে ওরস্যালাইন নিয়ে আসার জন্য জল্লারপাড় পয়েন্টে যায়,সেখানে যাওয়ার পর পর তার পুর্ব পরিচিত ৫-৬ জন ছেলে তাকে ডেকে নিয়ে পয়েন্ট সংলগ্ন ওয়াকওয়ের একটু ভেতরে নিয়ে সেখানে আরমানের শরীরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তাকে রাস্তায় ফেলিয়ে যায়,এসময় তার চিৎকার শুনে পথচারীরা এগিয়ে এসে তাকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্হায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আরমানকে মৃত ঘোষনা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের পিতা-মাতা সহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে আরমানে মৃতদেহ দেখতে পান। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট কতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
তিনি জানান,ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেছে।বৃহস্পতিবার গভীররাতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শিপলু নামক এক ব্যাক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার কারণ ও জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ সহ ১৫-১৬ জনকে আসামী করে সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।