জহিরুল ইসলাম মিশু,সিলেট ব্যুরো: টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে থাকায় সিলেট নগরীসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলাতেও বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১.৪৩ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ গতকাল একই সময়ে এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১.২৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ পয়েন্টে পানি গতকালের চেয়ে আজ বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট পয়েন্টে পানি ছিল ১০.৯০ মিটার। আজ সকালে পানিসীমা দাঁড়িয়েছে ১১.০৯ মিটার।
হঠাৎ করেই সুরমার পানি বাড়ায় বেশ আতঙ্কের মধ্যেই রাত পার করছেন সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা।এদিকে সোমবার রাতে সিলেট নগরীর অনেকের বাসায় পানি বন্দী ছিলেন। এখনও নগরীর অনেক এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে রয়েছেন।অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন পানি বাসায় প্রবেশ করার কারণে। যাদের বাসায় পানি প্রবেশ করেনি তারাও রয়েছেন অনেকটা চিন্তার মধ্যে। বন্যার চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করেছেন তারা এখন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন অনেকেই।
এদিকে অবিরাম বর্ষণে ও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরীর সোবহানিঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, মোমিনখলা এলাকায়।
এছাড়াও সিলেট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন হাওরের পানিও বাড়ছে সমানতালে পাল্লা দিয়ে। গত ৫-৬ দিনের অবিরাম বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার বেশীরভাগ এলাকা প্লাবনের কবলে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট।অনেক জায়গায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।হঠাৎ করেই সুরমার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর বেশ কিছু জায়গায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।
এদিকে সিলেট নগরীতে আকস্মিক বন্যার সাথে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালের দিকে দেখা যায় কালীঘাট,যতরপুর,উপশহর, মেন্দিবাগ,তেররতন, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া, মোল্লাপাড়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকটি বাসা এবং বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
জৈন্তাপুর,কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব এলাকার অধিকাংশ লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব এলাকার উজানে বৃষ্টির পরিমাণ কমলে পানি কিছু কমে তবে বৃষ্টি বাড়লেই আবার বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। গত চার পাঁচ দিন থেকে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে সীমান্তবর্তী এসব উপজেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। বিশেষ ক্ষেতের ফসল ও পুকুরে চাষের মাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে।
সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী জানান,গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণেই মূলত সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়েছে।
সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান,সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এটি দুশ্চিন্তার কারণ।তিনি আরও জানান,ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে,আর সেই পানি উজান বেয়ে বাংলাদেশে আসছে।যদি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি না কমে এই পানি কমার কোন সম্ভাবনা নেই। টানা বর্ষণ আর ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১.৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।