ফায়ার সার্ভিসের ১৭ ইউনিটের আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় সিলেট নগরের লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আজ সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগে মার্কেটের ২০ থেকে ২৫টি দোকান পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব না হলেও ব্যবসায়ীদের দাবি কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।
হকার্স মার্কেটের গাঘেঁষে আরো একাধিক মার্কেট ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থাকায় বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা মিলেছে।
জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে নগরের বন্দরবাজারসংলগ্ন লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেটের ৫ নম্বর গলির একটি দোকানে আগুন লাগে। অল্প ব্যবধানে তা আশপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে মার্কেটের ২ ও ৪ নম্বর গলিতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সিলেটের ৯ ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতা বিবেচনায় পার্শ্ববর্তী ফায়ার স্টেশনেও খবর দেওয়া হয়। এরপর একে একে ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জসহ বিভিন্ন স্টেশনের আরো ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। মোট ১৫ ইউনিটের সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ৫টা ২৩ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
হকার্স মার্কেটে কাপড়, জুতা, কেমিক্যাল, কাগজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের পাইকারি, খুচরা দোকান রয়েছে। পাশাপাশি মার্কেটের দোকানের বড় অংশ বিভিন্ন পণ্য বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের গোডাউন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেসব দোকান আগুনে পুড়েছে সেগুলোর বেশির ভাগেই ঈদ উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার পণ্য তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আগুনে সব পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের একদিন আগে এমন ভয়াবহ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় কোনো কোনো ব্যবসায়ী রীতিমতো সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কেউ কেউ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যাঁদের দোকানের পুরোপুরি পুড়ে যায়নি তাঁরা আংশিক বেঁচে যাওয়া মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ কবির আহমদ বলেন, ‘আমাদের অনেক ব্যবসায়ী এ ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে গেলেন। এই মার্কেটে ১ হাজার ৩৫টি দোকান। এখানে কর্মরতদের পরিবারের পাঁচজন করে সদস্য ধরলে কত হাজার মানুষের জীবিকার উৎস এটি! অনেক পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়বে। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘এক গলিতে নয় কয়েকটি গলিতে আগুন লেগেছে। কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ‘
অগ্নিনির্বাপণে নেতৃত্ব দেওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম ভূঞা বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৭টি ইউনিট কাজ করেছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে ২০-২৫টি দোকান পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে। ‘
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থলে হাজির হন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুর হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। আগুন না নেভা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তাঁরা।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগুনের ভয়াবহতা দেখে প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী করতে পারি আমরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। আমি সিটি করপোরেশনের সবগুলো পানির ভাউচার প্রস্তুত করে পানি দেওয়া শুরু করি। কিন্তু এই মার্কেটের রাস্তা এত সরু যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকবে কি পাইপ ঢুকাতেই বেগ পেতে হচ্ছিল। রাস্তা তাঁরা সংকুচিত করে ফেলেছেন। এ কারণে বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক আগেই আমরা এই মার্কেটকে নতুন করে গড়ার মহাপরিকল্পনা নিয়েছিলাম। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘এ মার্কেটে পলিথিন, ম্যাচের গুদাম, কাপড় মানে যেগুলোতে আগুন লাগলে দ্রুত বাড়ে সেগুলো রয়েছে। তাই এটার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ‘
বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ আগুন যদি আরো ভয়াবহ রূপ নিত তাহলে পার্শ্ববর্তী ব্যাংক পাড়া, মহাজনপট্টি, প্রধান ডাকঘর, কালিঘাট, বন্দর পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারত। মানে এটা একটা ভয়াবহ চিত্র হয়ে দাঁড়াত। আল্লাহ আমাদের বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন। ‘
ঈদের ছুটির পরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা পয়েন্টে পয়েন্টে মার্কেটে ফায়ার জোন করার চিন্তা মাথায় এসেছে। অফিস খুললেই এ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ শুরু করব। ‘