জহিরুল ইসলাম মিশু: সিলেটে চলছে জ্বালানি তেল সংকট। সিলেটের ফিল্ডগুলোতে উত্তোলন বন্ধ ও চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পরিবহন সমস্যায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময় ধরে জ্বালানি তেলের এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না সিলেটের ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার জানিয়েও এবং কঠোর আন্দোলনের দিয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।
এ অবস্থায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে গত প্রায় দেড় বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বন্ধ। যে কারণে তেল সংকটে পড়েছেন এখানের ব্যবসায়ীরা। গত বছরের অক্টোবরে সিলেটে তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করে আন্দোলনের হুমকি দেয়ার পরে তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো হয়। তবে পর্যাপ্ত ছিলো না এ সরবরাহ।
সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলােতে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগন নির্ভর। সংশ্লিষ্টদের অভিযােগ, রেল বিভাগের উদাসিনতাও সিলেটে তেলের তীব্র সঙ্কটের একটি অন্যতম কারণ।
এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে আবারও সিলেটে তেলের সঙ্কট দেখা দেয়। এই সংকটের জন্য সংশ্লিষ্টরা সিলেটে উৎপাদন বন্ধ, চট্টগ্রামে তেলশূন্যতা ও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ওয়াগন আসার অনিয়মকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরবরাহ অনুযায়ী মাত্র ৩ থেকে সােয়া ৩ লক্ষ লিটারের মতাে মতো পড়ে। সে তেল সিলেটের ৪টি ডিপাের মধ্যে ভাগ করে নেন তারা। এর জন্য কোনো কোম্পানিই তাদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক বছর পূর্বেও সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা হতাে। সেসময় সিলেটে কখনাে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়নি। ১ বছরের বেশি সময় থেকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ পুরােপুরি বন্ধ করে সিলেটের পাম্প মালিকদেরকে ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি সরবরাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ করাকে সিলেটবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।
তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪টি তেলবাহী ওয়াগন আসে। প্রতিটি ওয়াগনে গড়ে ৩ লক্ষ লিটার করে জ্বালানি তেল থাকে। তবে ওয়াগনগুলোর সিডিউলের কারণে কখনো ওয়াগন আসা বিলম্বিত হয়। এছাড়া কিছুদিন থেকে চট্টগ্রামেও তেলের ঘাটতি থাকার কারণে সিলেটে এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে, চলমান সংকট থেকে উত্তরণ ও সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নবাগত জেলা প্রশাসক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে জ্বালানি তেল সংকট একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছি। আমরা আর পারছি না, আমাদের দেওয়া আশ্বাস পূরণ না করা হলে এক সপ্তাহ পর আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো।