সিলেটে করোনা রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্তের প্লাজমা সংগ্রহে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী তরুণ। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মিলে ‘ইমার্জেন্সি প্লাজমা কালেকশন টিম’ নামে প্লাটফর্ম তৈরি করে, এই মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের নেতৃত্বে আছেন মক্তার হুসেন মান্না নামের উদ্যমী এক তরুণ।
জানা গেছে, ‘ইমার্জেন্সি প্লাজমা কালেকশন টিম’র সদস্যরা এ পর্যন্ত ১৬০ জন করোনা রোগীকে প্লাজমা সংগ্রহ করে দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি সিলেটজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে প্লাজমার চাহিদা। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি প্লাজমার তাগিদ থাকলেও ডোনার সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে ওই টিম।
এ বিষয়ে টিমের সদস্যরা জানান, সচেতনতার অভাবে এবং কিছু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্লাজমা দানের মতো মহৎ কাজে এগিয়ে আসছেন না। আবার কোভিড-১৯ শুরুর পর প্রথম দিকে হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য দিলেও এখন আর আগের মতো তথ্য দিচ্ছে না। ফলে মানবিক প্লাজমা সংগ্রহে তাদের বেগ পেতে হয়।
সদস্যরা বলেন, করোনা থেকে সুস্থ হবার ১৪ দিন পর থেকে ৩-৪ মাস পর্যন্ত কেউ চাইলে প্লাজমা দিতে পারেন। কেউ চাইলে দুর্লভ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্লাজমা দানের মতো কাজে সম্পৃক্ত হয়ে জীবন বাঁচাতে পারেন একজন মুমূর্ষু রোগীর।
‘ইমার্জেন্সি প্লাজমা কালেকশন টিম’র সদস্য এস এ রুমেল বলেন, ‘ভালোলাগা থেকে এই কাজগুলো করি। কাউকে প্লাজমা সংগ্রহ করে দিতে পারলে খুবই তৃপ্তি পাই।’
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবার পর থেকে প্রতিদিনই প্লাজমার চাহিদা থাকে। কিন্তু ডোনারের অভাবে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না তারা। সচেতনতার অভাবে এবং কিছু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্লাজমা দানের মতো মহৎ কাজ এবং দুর্লভ সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছেন। আগে হাসপাতালসহ অনেক প্রতিষ্ঠান করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেও এখন আগের মতো আর সাহায্য মিলছে না। এতে অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে প্লাজমা সংগ্রহ।
‘ইমার্জেন্সি প্লাজমা কালেকশন টিম’র প্রধান সমন্বয়ক মক্তার হুসেন মান্না বলেন, ‘তরুণরা স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন, দেখাতে ভালোবাসেন। বিশ্বে যতবারই বিপর্যয় এসেছে তখনই তরুণরা মানবিক কাজ করেছেন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেখেছি, যখনই কোনো অঞ্চলে মহামারিসহ বিপর্যয় কিংবা কোনো সমস্যা আবির্ভূত হয়, তখনই প্রয়োজন হয় মানবিক সংগঠন তৈরির। তরুণদের মানবিক সমন্বয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজে সম্ভব।’
তিনি জানান, মানবিক কর্মকাণ্ডের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রায় ২শ তরুণ নিয়ে মহামারির এই সময়ে প্লাজমাসহ রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয়। সিলেট বিভাগজুড়ে তাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সকলের সহযোগিতা পেলে করোনা মহামারি শেষ না হওয়া অবধি তাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মক্তার হুসেন মান্না।