যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে সিংহভাগই সিলেটের বাসিন্দা। সেখানকার বাংলাদেশিদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়রাই সিলেটি। বড় আকারের সুপার শপ, রেস্টুরেন্ট, টেকওয়ে প্রভৃতির মালিকানায়ও সিলেটিদের নেতৃত্ব রয়েছে। ফলে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানি করা গেলে সেখানে বাজার ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা লন্ডনে ফ্রোজেন ফিশ, শাক-সবজি, ফলমূল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা, পান, বিন্নি চাল, গার্মেন্টসামগ্রী রপ্তানির পরিকল্পনা করছেন।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্যে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী শাড়ি, সাতকরা, জারা লেবু, পান, বিন্নি চাল, বেতের আসবাবের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যদি সিলেট থেকে সরাসরি রপ্তানি শুরু হয়, তবে এখানকার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নতুন প্রাণ পাবে, লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি।
সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ায় সম্ভাবনায় দেখা দিয়েছিল রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের। যুক্তরাজ্যের বাজারে সিলেটে উৎপাদিত কৃষি ও কুঠির শিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওয়্যারহাউজ না থাকায় সেই সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যদিও সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ওয়্যারহাউজ স্থাপনে সরকারের বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বাজারে সিলেটের পণ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারি উদ্যোগে ওয়্যারহাউজ নির্মাণের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চেম্বারের নেতৃবৃন্দরা।
বর্তমানে পণ্য রপ্তানির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঢাকার শ্যামপুরে একটি সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজ রয়েছে। সেখান থেকে প্যাকেজিং ও কোয়ারেন্টিন সার্টিফিকেট নিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সিলেটের রপ্তানিকারকদের।
এ ছাড়া পচনশীল পণ্যগুলো ঢাকায় নিয়ে যেতে পচন ধরে যায়। রপ্তানি বাড়াতে ও বিড়ম্বনা রোধ করতে শ্যামপুরের মতো সিলেটেও ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের কাছে চিঠি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সুবর্ণ সুযোগ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পণ্য রপ্তানির জন্য সিলেটে ওয়্যারহাউস নির্মাণ জরুরি। এটা নির্মিত হলে শাক-সবজি, ফলমূলসহ কৃষিপণ্য বেশি পরিমাণে রপ্তানি সম্ভব হবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের শোয়েব দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে জানান, সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পর সিলেট চেম্বার রপ্তানিকারক, উৎপাদক ও ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমন্বয় করা গেলে এবং ওয়্যারহাউস নির্মিত হলে রপ্তানি জোরদার ও সহজ হবে।
ওয়্যারহাউজ নির্মাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা এতোদিন লকডাউনের অজুহাত দেখিয়েছেন।আমরা আশাবাদী খুব শীগ্রই ওয়্যারহাউজ স্হাপন হবে।এর ফলে সিলেটের কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং সিলেটের ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।