জহিরুল ইসলাম মিশু,সিলেট ব্যুরোঃ সিলেটের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে আরও একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন নামে এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৩৩ কোটি টাকার বেশি। শুরুতে এ প্রকল্পে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে ৯৫ শতাংশ এবং কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে বাকি ৫ শতাংশ অর্থায়নের কথা থাকলেও এখন এটি বাস্তবায়ন করা হবে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে (জিওবি)।
এজন্য নতুন করে ডিপিপি (উন্নয়ন পরিকল্পনা) প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও এসজিএফএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের ১২ মে রশিদপুর অনুসন্ধান কূপ-১১ খনন করতে ডিপিপি প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য পেট্রোবাংলায় পাঠায় সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড।
গত ৯ সেপ্টেম্বর জ্বালানি বিভাগের বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের এক জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর। ডিপিইসির এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় ডিপিপি তৈরি করে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড। নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কোম্পানির সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে নতুন ডিপিপি অনুমোদন হওয়ার পর পেট্রোবাংলায় পাঠানো হয়। পরে পেট্রোবাংলা থেকে ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, নতুন বছরে আমরা রশিদপুর-১১ অনুসন্ধান কূপ খননের প্রকল্পটি নিচ্ছি। চলমান গ্যাস সংকট কাটাতে সরকার দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন এ কূপটি খনন করা হবে। সব ঠিক থাকলে এ কূপ থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে।
সম্পূর্ণরূপে সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির নিজস্ব ও জিডিএফের অর্থায়নে ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
কোম্পানির আওতায় বাস্তবায়নাধীন সাতটি প্রকল্পের বিপরীতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জিডিএফ, জিওবি ও এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) কাছে ঋণদান ২৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিওবি ও এডিবির ঋণের সুদসহ কিস্তি বাবদ ২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাসের বর্তমান ওয়েলহেড মার্জিন ঘনমিটার প্রতি শূন্য দশমিক ২০২৮ টাকা। এ হিসাবে গ্যাস বিক্রয়ের আয় থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে কোম্পানির তারল্যের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে।
এ অবস্থায় প্রকল্পটি জিডিএফ ও কোম্পানির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হলে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য বর্তমানে রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ দিয়ে দৈনিক ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। কূপগুলো হল ১, ৩, ৪, ৭ ও ৮। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে ২ ও ৫ নম্বর কূপ। বন্ধ থাকা কূপ দুটি ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড।