সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার প্রায় মাসদিন ধরে নিজের ভিটে ছাড়া হয়ে পালিয়ে ঘুরছেন,প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি,সন্ত্রাসী আচরন ও তাদের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটের অভিযোগ এনেছেন মুক্তিযোদ্ধার এ পরিবার।
সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ভোলাগঞ্জ এলাকার আদর্শ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জাব আলী,তিনি অনেক বছর আগে মারা যান,তাঁর স্ত্রী,দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন,মেয়ে দুইটি বিয়ের পর তাদের স্বামীর বাড়িতে থাকেন,একমাত্র ছেলে হেলাল মিয়া তার মা মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জাব আলীর স্ত্রী আরিজা বেগম (৮০),হেলালের স্ত্রী,দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সহ মোট ৬ জনের পরিবার নিয়ে তারা আদর্শ গুচ্ছগ্রামে বসবাস করে আসছেন।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী ঐ এলাকায় একটি সালিশ বিচার শেষে ফেরার পথে স্হানীয় সালিশি ব্যাক্তিত্ব ইন্তাজ আলী কতিপয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার পর স্হানীয় কিছু লোকজনের নেতৃত্বে পুর্বের শত্রুতার জেরে মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জব আলীর বড়িতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে তাদের বড়িঘর ভাঙ্গচুর,ঘরে থাকা আসবাবপত্র লুটপাট,ঘরে রক্ষিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা পয়সা গরুছাগল ইত্যাদী সহ প্রায় ১৫-১৬ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ হামলায় মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জব আলীর স্ত্রী ৮০ বছর বয়স্ক আরিজা বেগম ও পরিবারের অন্যান্যরা গুরুতর আহত হন। এসময় তাদেরকে বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার অভিযোগ করেছেন।
এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধা এ পরিবার বাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর দিনাতিপাত কাটছেন। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জব আলীর একমাত্র ছেলের বউ সেলিনা বেগম বাদী হয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরে গত ১১ ই মার্চ ২০২১ তারিখে এ ঘটনার বর্ণনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে তাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে স্হানীয় ১২ জনের নাম উল্লেখ সহ মোট ২৫/৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে ও একখানা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগকারী সেলিনা বেগম প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন,আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন,এর মধ্যে সবার বড় হচ্ছে মেয়ে,এঘটনার কিছুদিন অর্থাৎ প্রায় ২/৩ মাস আগ থেকে তার বিয়ের আলাপ আলোচনা চলছিলো,এজন্য আমিও আমার পরিবারের প্রস্তুতি হিসেবে ঘরের মধ্যে মেয়ের স্বর্ণালংকার সহ টাকা পয়সা আসবাবপত্র মওজুদ করে রাখি,ঘটনার দিন পরিকল্পিতভাবে আমার ঘরে রক্ষিত এসকল মালামাল লুটপাট করে তারা নিয়ে যায়,এ ছাড়াও তারা আমাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলেছে আমরা বড়িতে থাকলে আমাদেরকে প্রাণে হত্যা করবে। তিনি বলেন আমার দুইটা ছেলে মাদ্রাসায় পড়েন ও ছোট একটা মেয়ে স্কুলে পড়েন, আমার শশুড়ি ৮০ বছর বয়স্ক আরিজা বেগম এ হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তিনি এখন খুব অসুস্হ আছেন,এ অবস্হায় তাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের পরিবার বাড়ি ছাড়া অবস্হায় খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি,আমার ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত রয়েছে, তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করে তাদের বড়িঘরে নিরাপদে বসবাস করার নিশ্চয়তা চান।
মরহুম মুক্তিযোদ্ধা সাঞ্জব আলীর স্ত্রী আরিজা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমার স্বামী একজন স্বশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন,তিনি প্রায় ৩৫/৩৬ বছর আগে মারা যান,তার স্বামী সরকার স্বীকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা, তার স্ত্রী হিসবে আমি ও আমার পরিবার সরকার প্রদত্ত সবধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছি,বর্তমানে আমরা যে বাড়িতে আছি সেটাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারী অনুদানে তৈরী করেছিলাম,তিনি বলেন আমার বসত বাড়িতে প্রায় এক বিঘা জমি রয়েছে,ওই এলাকায় জমিজামার মুল্য বেড়ে যাওয়ায় স্হানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র আমাদেরকে এখান থেকে বিতাড়িত করে আমার বাড়িটি দখল করে নেওয়ার জন্য বহুদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে,তাদের কুমতলবের অংশ হিসেবে আমার পরিবারের উপর এ ধরনের জুলুম, অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি আপসোস করে বলেন, প্রতি বছর জাতীয় দিবস,বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মু্ক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবার হিসেবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সকল প্রোগ্রামে আমাদেরকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়,সেসকল প্রোগ্রামে গেলে সেখানে আমাদেরকে সম্মানিত করা হয়, এ জন্য আমার পরিবার খুবই গর্ভিত,কিন্তু এবছর স্বাধীনতার ৫০ বছরপুর্তী অনুষ্ঠানে আমাদের পরিবারকে নিমন্ত্রণ জানালেও এসকল সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা ঐতিহাসিক এ অনুষ্টানটিতে আমি ও আমার পরিবার উপস্হিত থাকতে পারি নাই, এটা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে তিনি তার বাড়িঘরে হামলা, লুটপাটকারীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার, বাড়িঘর লুটপাটের ক্ষতি পুরন সহ নিজ বসত বড়িতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানান।