গতকদিন আগে এক বিয়েতে অংশগ্রহণের সুবাদে হরিণবেড় এলাকায় গিয়েছিলাম। রাতে চা খেতে বাজারে যাওয়ার পথে একটি দৃষ্টি নন্দন মসজিদ আমাকে মুগ্ধ করে তখন কথা প্রসঙ্গে জানলাম পাশেই হরিপুর জমিদার বাড়ি বা বড় বাড়ির কথা, সেই থেকে সিদ্ধান্ত হরিপুর যাবো।
রবিবার ( ২২/০৮/২০২১) অনেকটা হুটকরে মোটরবাইক নিয়ে রওয়ানা হলাম।
অবশেষে আকাবাঁকা গ্রামীন পথ বেয়ে লাখাই উপজেলার নিকটবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত সেই ঐতিহাসিক স্থাপনায় এসে পৌছলাম।
বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। বাকি দিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা। বাড়ির বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়ি
প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ১৬ বিঘা জমির ( প্রায় ৪৮০শতাংশ) বিশাল সিমানার ভিতর লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন তিন তলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে মোট ৬০ টি কক্ষ, দরবার হল, রংমহল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, নাচ ঘর, পুকুর, রন্ধনশালা, খেলার মাঠ এবং মন্দির।
এছাড়া হরিপুর বড় বাড়ি খ্যাত জমিদার বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে রয়েছে একটি শান বাঁধানো ঘাট , আর ঘাটের উত্তর দিকে আছে হরিপুর জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী এবং অপরদিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ।
জমিদার বাড়ির শান বাঁধানো ঘাট থেকে অবলোকন করা যাবে দৃষ্টির শেষ সীমা পযর্ন্ত অথৈজলরাশ্মি।এযেন এক অন্যরকম নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্য মতে প্রায় ১৭৫ বছর আগে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী হরিপুর জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। যেখানে প্রতিদিন ৩শত নির্মান শ্রমিক ৯বছর কাজ করেন।
কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী এবং পরবর্তীতে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী উত্তরাধিকারসুত্রে এই জমিদার বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি লাভ করেন।
১৯৪৭ সালের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী হরিপুর জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের রেখে কলকাতায় পাড়ি জমান।
আজো বেশকিছু হিন্দু ও মুসলমান পরিবার মিলেমিশে এখানে বাস করছে বলে জানান প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন। ইতিপুর্বে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হরিপুর জমিদার বাড়িতে বেশকিছু নাটক ও সিনেমার দৃশ্যধারন করা হয়।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রটির উল্লেখযোগ্য অংশটুকুও হরিপুর জমিদার বাড়িতে ধারন করা হয়, এছাড়াও নাইওরী বর্তমানে হরিপুর জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত রয়েছে।
সুযোগ করে ঘুরে আসুন ঐতিহাসিক এই স্থাপনায় বিশ্বাস ভালো লাগবে। সিলেট হবিগঞ্জ থেকে হরিপুর জমিদার বাড়ি যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক রুট হচ্ছে হবিগঞ্জ লাখাই অঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে নাসিরনগর হয়ে হরিপুর।।
এছাড়াও ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে যাওয়া। ঢাকা হতে সিলেট অথবা হবিগঞ্জগামী বাসে মাধবপুর বাজারে নেমে সেখান থেকে সিএনজি ভাড়া করে নাসিরনগর হরিপুর জমিদার বাড়ি দেখতে যেতে পারবেন।