সিলেটে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হেরে ভোটারদের জুতাপেটা করেছেন সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নশর আলী।
এ ঘটনায় রোববার (৫ ডিসেম্বর) সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৮ নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী।
জানা গেছে, জুতাপেটা করার পর ছয়জন ভোটারকে সবার সামনে জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরানো হয়। নির্বাচনে খরচ হওয়া ৩ লাখ টাকা না দিলে তাদেরকে এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেন নশর আলী।
নির্বাচনে যারা নশর আলীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও জিম্মি করে রেখেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১৩ নভেম্বর রাতে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সোনাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের একজন ইয়াসিন মিয়া (৩৩) সোনাপুর গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ভয়ে এখন এলাকাছাড়া তিনি।
ইউপি সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নশর আলীসহ (৫০) তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন ইয়াসিন। অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন- ইউনিয়নের সোনাপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের কাঞ্চন বৈদ্য (৩০) ও সাকির মিয়া (২৩)।
স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউপিসহ জেলার তিন উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে বালাগঞ্জের বোয়ালজোড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার প্রার্থীর মধ্যে ফলাফলে বিজয়ী হন মোরগ প্রতীকের প্রার্থী তজম্মুল আলী।
নির্বাচনে ফেল করায় ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত জন ঘুড়ি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নশর আলী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ভোটারদের মধ্যে ইয়াসিন মিয়াসহ ছয়জনকে নির্বাচনের পর ১৩ নভেম্বর রাত ৯টায় ধরে লোকজন জড়ো করে ১০ বার জুতাপেটা করেন নশর। অপর পাঁচজনকে পাঁচটি করে জুতাপেটা করা হয়।
এ সময় অভিযুক্ত নশরের ১৪-১৫ জন লোক তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে জুতার মালা পরিয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে ঘুরিয়ে ঢোল বাজানো হয়। নির্বাচনী ব্যয় বাবদ ৩ লাখ টাকা না দিলে তাদের গ্রাম ছাড়তে বলেন। আর যদি গ্রাম না ছাড়ে, তবে ছয়জনকেই হত্যা করা হবে। যে কারণে নিরুপায় হয়ে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেন ইয়াসিন।
মামলা দায়েরের পর আদালত প্রাঙ্গণে ইয়াসিন সাংবাদিকদের বলেন, নশর গুণ্ডা প্রকৃতির লোক। এলাকায় তাকে ছাড়া বিচার সালিস হয় না। তিনি শঙ্কা করছেন, নশর ও তার লোকজন তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, ওই ইউনিয়নে সদস্যপদে চারজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১ নম্বর আসামি নশর আলীর বিরুদ্ধে কাজ করায় ইয়াসিনসহ ছয়জনকে জুতাপেটা করে গ্রামছাড়া করা হয়। তার নির্বাচনী খরচ ৩ লাখ টাকা না দিয়ে গ্রামে গেলে তাদের খুন করে মরদেহ গুম করার হুমকি দেন নশর। মামলা দায়েরের পর বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হাসান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। কেউ এ বিষয়ে অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতাম।