সুনামগঞ্জের মানুষের দুর্যোগ দুর্ভোগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। জেলার আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও যাত্রীবাহী বাসে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। শতাধিক পরিবার দিনযাপন করছে কয়েকটি বাসে। বাসেই চলছে তাঁদের রান্না-খাওয়া। এমনইভাবে বাসগুলো হয়ে উঠেছে যেন আশ্রয়কেন্দ্র। এখন সেখানে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট। এভাবে চারদিন পেরিয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি এসব মানুষের। বাসে আশ্রয় নেওয়া সবার চোখেমুখে তাই নানা শঙ্কার ছাপ।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের উঁচু জায়গা আব্দুর জহুর সেতু। গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলার সর্বত্র বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়লে বাসগুলো আশ্রয় নেয় এই সেতুতে। এরপর আশপাশের মল্লিকপুর, কালীপুরের বাসিন্দা সেই বাসেই গত চারদিন ধরে আশ্রয় নিয়ে বন্যা থেকে বেঁচে আছেন।
পশ্চিম মল্লিকপুরের বাসিন্দা নুরজাহান (৪০) বলেন, ‘বৃহস্পতিবার হঠাৎ বাড়িতে বুক সমান পানি উঠলে পরিবার নিয়ে প্রথমে মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নিই। পরে ওই বিদ্যালয়েও কোমর সমান পানি উঠলে আব্দুর জহুর সেতুতে থাকা বাসে থাকতে শুরু করি। এখানেই গত চারদিন ধরে আছি।’
বাসে আশ্রয় নেওয়া কালীপুরের জালাল উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘ছেলেমেয়ে বউসহ বাসে আশ্রয় নিয়েছি। বাসের সিটেই থাকি, ঘুমাই। এখানেই রান্না চলে। খাবার পানির সংকট। খাবার নেই। কোনোমতে বেঁচে আছি।’
রুমা বেগম (৩০) বলেন, ‘পানি থেকে বাঁচতে চার ছেলেমেয়েসহ বাসেই আশ্রয় নিয়েছি। চারদিন কেটে গেছে। অথচ, কেউ আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এদিকে, যতই দিন যাচ্ছে পানিবন্দি মানুষের তীব্র খাদ্য ও খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করতে করতে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। বানভাসীদের চোখেমুখে এখন শুধুই আতঙ্ক। যদিও গতকাল রোববার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ৫টি দল জেলার পাঁচ উপজেলায় ত্রাণ সহায়তা দিতে শুরু করেছে। জানা গেছে—সরকারের পক্ষ থেকেও বরাদ্দ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও নগদ টাকা।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এটাকে স্মারণকালের ভয়াবহ বন্যা উল্লেখ করে জানান, এমন বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি এর আগে সুনামগঞ্জের মানুষ দেখেনি। গ্রামের অবস্থা তো ভয়াবহই, শহরের সব জায়গায়, এমনকি ঘরের ভেতরেও কোমর পানি উঠেছে।
ত্রাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়ার জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি।’