মাছের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গবেষণা। উদ্ভাবনের পর ভ্যাকসিনটি দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এবার মাঠপর্যায় ট্রায়ালে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বায়োফ্লিম’। এর আবিষ্কার করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ সূত্রে জানা যায়, গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ‘বায়োফ্লিম’ নামের ভ্যাকসিনটি স্বাদু পানিতে চাষকৃত মাছের এরোমোনাস হাইড্রোফিলা নামক ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্ষত যা আলসার, পাখনা ও লেজ পচা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। শুরুতে পাঙ্গাশ মাছের ওপর এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করলে ৮৪ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য মাছে প্রয়োগের মাধ্যমেও এর সফলতা পাওয়া যায়। বায়োফ্লিম ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মড়ক প্রায় ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে জানান গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আরো গবেষণার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব।
গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্প্রতি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদকে। সেই বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কেনা হয় বায়োফ্লিম ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করার জন্য ছয়টি আধুনিক যন্ত্র। এদের মধ্যে রেফ্রিজারেটেড শেকার ইনকিউবেটর, অটোক্লেভ মেশিন, লেমিনার এয়ারফ্লো, বায়োকেমেস্ট্রি এনালাইজার, হট এয়ার ওয়েভার ও কম্পিউটার মাইক্রোস্কোপ। এদিকে ভ্যাকসিন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গবেষণা কাজে নতুন যুক্ত হওয়া যন্ত্রপাতির উদ্বোধন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. মতিয়ার রহমান। ভ্যাকসিনের উদ্ভাবক ড. মো আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নতুুন এই যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রমকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করবে। আগে গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যন্ত্রপাতির সংকট ছিল।
সেটি এখন কেটে গেছে। তিনি জানান,ভ্যাকসিনটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শেষ করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। তবে মাঠপর্যায়ে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শেষ করার পরেই এ বিষয়ে আরো ভালো বলা সম্ভব হবে। আমরা এখন বিভিন্ন পুকুরে এই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করব। এজন্য ইতোমধ্যে পুকুরও নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে প্রথম এই ভ্যাকসিনটি পাঁচ মিলিমিটার উৎপাদন করেছি। তিনি আরো জানান,জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, চিলিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৮ প্রজাতির মাছে ২৮ ধরনের ভ্যাকসিন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার হলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হয়েছে।
পাঙ্গাশ মাছের ওপর গবেষণা করে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হলেও স্বাদুপানিতে চাষযোগ্য ইন্ডিয়ান মেজর কার্প যেমন, রুই, কাতলা, কই, শিং প্রভৃতি মাছের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন হয় প্রায় ৪০ লাখ টন। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বের ৫৫টি দেশে রফতানি করা হয়। তবে মাছের বিভিন্ন রোগের কারণে মড়ক দেখা দেয়। এতে প্রচুর পরিমাণ মাছ মারা যায়।
মাছচাষিরা আর্থিকভাবে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম হলেও কার্যকরী ভ্যাকসিনের অভাবে প্রতিবছর বিভিন্ন রোগে প্রচুর পরিমাণ মাছে মড়ক দেখা দেয়। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৎস্যচাষিরা। তাই কমছে মাছের উৎপাদন। ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে লাভবান হবেন দেশের মৎস্যচাষিরা।