জীবিত থেকেও তিনি মৃত। টানা ১২ বছর বয়স্ক ভাতা পেলেও মৃত দেখিয়ে এবার তার ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস ধরে ভাতা না আসায় অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মৃত। তাই ভাতা পাচ্ছেন না।
এমন কাণ্ড ঘটেছে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক গ্রামে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি হচ্ছেন আলীমুদ্দিন ভূঁইয়া। বয়স প্রায় ১০০ ছুঁই ছুঁই। কে এমন কাজ করেছেন তা জানেন না স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউই। অথচ সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দেওয়া মৃত্যু সনদটিও ইউপি চেয়ারম্যান সই করা। এ নিয়ে রীতিমতো হতবাক বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আলীমুদ্দিন ভূঁইয়া। তেমন কিছু ভালো করে বলতেও পারেন না। কথা বোঝেনও কম।
তিনি বলেন, ছয়/সাত মাস ধরে ভাতা পাচ্ছি না। হঠাৎ জানতে পারি, আমার নাম মৃত তালিকায় তোলা হয়েছে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও অফিসে গিয়েছি। তারা কাগজপত্র রেখেছে। কিন্তু এখনো কিছু হয়নি।
তার পুত্রবধূ রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার শ্বশুরের নাম মৃত তালিকায় এসেছে শুনে আমি উপজেলায় ইউএনওর কাছে যাই। তার কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত দিই। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কে এমন করেছে তা জানার জন্য। সাত/আটদিন আগে সবশেষ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করি। চেয়ারম্যান বলেন, একবার আমি মৃত দিয়েছি, এখন জীবিত দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
রাবেয়া আরও বলেন, তিন মাস ধরে ঘুরছি। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।
মুড়িয়াউক ইউপি সদস্য নূর আলম জানান, আলীমুদ্দিন ভূঁইয়ার বয়স প্রায় ১০০ বছর বা তার বেশি হবে। তাকে সব সময়ই কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পান তাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ এ গ্রামেই আরেকজন আলীমুদ্দিন ছিলেন যিনি মারা গেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের কাছে বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার তালিকা চাচ্ছি। কিন্তু তিনি দিচ্ছেন না। দিলে হয়তো আমাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হতো। আমার গ্রামে কোনো লোক মারা গেলে অবশ্যই আমার জানার কথা। বিষয়টি শুনে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। কেউ না কেউ তো তালিকায় তুলেছে। এমনি এমনি তো তার নাম মৃত তালিকায় ওঠেনি।
আলীমুদ্দিন ভূঁইয়ার ভাতার কার্ড সংশোধনের বিষয়ে তিনি সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোমান মিয়া বলেন, স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে জানতে পেরে তার নাম মৃত তালিকায় দিয়েছিলাম। কিন্তু এটি ভুলে হয়েছিল। ভুল তো হতেই পারে। পরবর্তীকালে জানতে পেরে বিষয়টি সংশোধন করে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগির তিনি ভাতা পাবেন।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আফজালুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের তালিকায় আলীমুদ্দিন ভূঁইয়াকে মৃত দেওয়ায় আমরা অন্যজনকে বয়স্ক ভাতাটি স্থানান্তর করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি জানার পর সংশোধনের জন্য দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় তিনি ভাতা উত্তোলন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা সুলতানা সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। এর বাইরে মোবাইলফোনে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, মুড়িয়াউক ইউনিয়নের মুড়িয়াউক গ্রামের মো. আলীমুদ্দিন ভূঁইয়া ২০১০ সাল থেকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। ২০২২ সাল থেকে নিজ নিজ মোবাইলফোনের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার টাকা দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনিও মোবাইলফোনের মাধ্যমেই ভাতা উত্তোলন করছেন। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের জুলাই মাস থেকে তার বয়স্ক ভাতার টাকা বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি তিনি বিষয়টি জানার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার মৃত্যু হয়েছে মর্মে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোমান মিয়া সই করা একটি মৃত্যু সনদ দেওয়া আছে। ফলে তার বয়স্ক ভাতাটি অন্যজনের নামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি শুনে হতবাক হয়ে পড়েন। এরপর ধরনা দেন বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত সাজিয়ে সনদ দেওয়ায় এলাকায় সমালোচনা চলছে।