English

24 C
Dhaka
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি, তিনশ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে মামলা

- Advertisements -

জহিরুল ইসলাম মিশু: পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে টানা পঞ্চমদিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার ১৮ জানুয়ারি সকাল থেকেই বিভিন্ন হল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকেন তারা।
গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে সোমবারের মতো উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল কমিটি এবং ছাত্র উপদেষ্টাকেও সরে যেতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

নেতাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে শাবিতে যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ,মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা সহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।এসময় নেতৃবৃন্দরা বলেন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এই সংকট থেকে বের হয়ে আসার একটি পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা আমরা করব।আপনাদের দাবির প্রতি আমরাও একমত। প্রাথমিক দাবিগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় সে চেষ্টা করব। তবে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। যাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসে সে চেষ্টা চালাব।

তবে আমি এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত দুই থেকে তিনশ’ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন।

সোমবার দায়েরকৃত মামলার নম্বর ৫। মামলায় কোনো শিক্ষার্থীর নামোল্লেখ করেনি পুলিশ। তবে তারা দাবি করেছে, গত রোববারের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা শুধু ইটপাটকেলই নয়, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও ছুঁড়েছিল।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগের দাবিতে গত রোববার ১৬ জানুয়ারি ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। খবর পেয়ে জালালাবাদ থানার এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান,এএসআই ফারুক আহমদ, কনস্টেবল মিজানুর রহমান, কনস্টেবল নার্গিস আক্তার, এসআই নিহারেন্দু তালুকদার, কনস্টেবল তাপস বিশ্বাস, জোনাকি তালুকদার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন, এসআই মো. আসাদুজ্জামান, এসআই মো. মাহাবুর আলম মন্ডল, এসআই কাজী জামাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, মো. লোকমান হোসেন, লিটন চন্দ্র নাথ, এএসআই মো. কামাল হোসেন, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, খোরশেদ আলম, কনস্টেবল ইয়ারুপ মিয়া, কাওছার হাবিব, রকিবুল হাসান, শুকুর আলী, সঞ্জিত দাস, আলমগীর হোসেন, মেহেদি হাসান, মাজহারুল ইসলাম, সুহেল মিয়া, শিবা রাণী দাস, পারুল আক্তার, বিভা রাণী দাস, তানিয়া, তান্নি বেগম, সাথী রাণী নাগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।পরবর্তীতে এসএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম-উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রশাসন-উত্তর) গৌতম চন্দ্র দাসসহ এসএমপির ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যরা শাবিতে অবস্থান নেন।

এজাহারে লিখা হয় সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শুরু হয় ছাত্রীদের আন্দোলন। পরে শাবি ভিসির মৌখিক আশ্বাসে ছাত্রীরা সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেন। ১৫ তারিখ অবধি দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ওইদিন সাড়ে ৫টায় গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন ছাত্রীরা। উত্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ জানু আনুমানিক বিকাল ৩টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেয়। সেদিন বিকাল সোয়া ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তারা ড. এমএ ওয়াজদ আলী আইসিটি ভবনে তালা দিয়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে এসএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ ওই ভবনে ঢুকে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষর্থীদের দাবি নিয়ে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ জানান। তিনি ভিসিকে ভবন থেকে বের করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা কারো কথা না শুনে স্লোগান অব্যাহত রাখে। একপর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনরত ২-৩শ’ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নোয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুঁড়ে। এ ছাড়াও পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীরা সেদিন সোয়া ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা অবধি ক্যাম্পাসে অবস্থান করে থেম থেমে পুলিশের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জানমাল, আগ্নেয়াস্ত্র ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ১১ রাউন্ড রাবার কার্তুজ ও ২০ রাউন্ড সিসা কার্তুজসহ মোট ৩১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে।এ ছাড়া সিআরটি ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভিসিকে উদ্ধার করা হয়।

মামলার বাদী উল্লেখ করেছেন, ইটপাটকেল ও ককটেলে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর), জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত), এসআই আসাদুজ্জামান, কাজী জামাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, এএসআই কামাল হোসেন, ফারুক আহমেদ, কনস্টেবল রকিবুল হাসান, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, ইয়ারুপ মিয়া, কাওছার হাবিব, শুকুর আলী আহত হন। তারা ওসমানীতে চিকিৎসা নেন। শিক্ষার্থীদের ছোঁয়া গুলিতে কনস্টেবল সাবিনা আক্তারের বাম পায়ে গুরুতর জখম হয়। ইটপাটকেলে কনস্টেবল সঞ্জিত দাসের ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। সিআরটির কনস্টেবল ফাহাদ হোসেন অপুর মাথায় ফেটে যায় ইটের আঘাতে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন