English

21 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

সিলেট নগরীর রাস্তাগুলোতে সীমাহীন দুর্ভোগ,সিসিকের অপরিকল্পিত কাজ-খোলা ড্রেনে পড়ে কবি আব্দুল বাসিতের মৃত্যু

- Advertisements -

সিলেট নগরীর প্রায় সবক’টি রাস্তার অবস্থা এখন বেহাল।ড্রেন ভাঙা-নির্মাণ, নির্মাণের পর আবার ভাঙা- এসব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যেখানে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। অনেক জায়গায় সংস্কার কাজের জন্য খুড়াখুড়ির জন্য এবং কোথাও কোথাও বিটুমিনের আস্তরণ উঠে বেরিয়ে এসেছে পাথর। এসব ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় খানাখন্দ আরও বাড়ছে। ফলে এসব রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।সড়কজুড়ে নির্মাণসামগ্রী, কাদা, ধুলো, যানজট- এসবের দুর্ভোগ যেন শেষ হওয়ার নয়। এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের এই অপরিকল্পিত উন্নয়নের বলি হয়ে প্রাণ হারালেন কবি, ছড়াকার ও শিক্ষক আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ।
নগরজুড়ে চলমান সিলেট সিটি করপোরেশনের এসব নির্মাণকাজে কোনজায়গায়ই মানা হচ্ছে না নির্মাণবিধি। ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে নির্মাণ কাজ। সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে খোলা রেখে দেওয়া হচ্ছে ড্রেন। খোলা ড্রেনে রডসহ নির্মাণসামগ্রীও ফেলে রাখা হচ্ছে এবড়ো-থেবড়ো। সড়কে ফেলে রাখা হচ্ছে খোলা রড। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। এরকমই একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান কবি, ছড়াকার ও শিক্ষক আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। সিলেট সিটি করপোরেশনের ‘উন্নয়নের ড্রেনে’ পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন সিলেটের সাহিতাঙ্গণের এই প্রিয় মুখ।
গত সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর আম্বরখানার হুরায়রা ম্যানশনের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের পেটের মধ্যে রড ঢুকে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এদিকে নগর কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন একটি খোলা ড্রেনে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। তবে এ মৃত্যুর দায় কার? টনক নড়বে কি নগর কর্তৃপক্ষের? এমন মন্তব্য এখন সর্বমহলে। আবার সিলেটের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে এটিকে একটি হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করা হচ্ছে।
এদিকে, নগর উন্নয়নের জন্য রাস্তার দু’পাশে খোঁড়াখুঁড়ি অব্যাহত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ের টানা বৃষ্টিতে সারা রাস্তাজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কিছু কিছু স্থানে জোড়াতালির সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে। তবে, নগরীর অধিকাংশ রাস্তা সওজ’র থাকায় পুরো রাস্তা কার্পেটিং করা যাচ্ছে না বলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিসিক। তবে কিছু সড়কে সংস্কার কাজ চললেও বেশিরভাগ রাস্তার বেহাল দশা। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারের কোর্টপয়েন্ট,জিন্দাবাজার, হাসান মার্কেটের আশপাশ, জেল রোড থেকে ওসমানী শিশু পার্ক, মিরাবাজার-শিবগঞ্জ ও টিলাগড়, পাঠানটুলা- মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা থেকে চৌহাট্টা, তালতলা, লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর থেকে রেলওয়ে সড়ক, পুরাতন রেল স্টেশন সড়ক, কায়স্থরাইল-বাইপাস সড়ক, কাশবন থেকে রায়েরগাঁও, মোমিনখলা ইত্যাদি এলাকার সড়কের অবস্থা একেবারেই বেহাল।
নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীর প্রায় ওয়ার্ডের অলিগলির সড়কগুলোতেও কয়েক বছর ধরে পুরোপুরি সংস্কার কাজ হয়নি। প্রতি বছরই উন্নয়নের নামে চলছে জোড়াতালির কাজ। দিনে যেমন তেমন, রাত হলেই ভাঙাচোড়া রাস্তা দিয়ে গাড়ি বা যানবাহন নিয়ে চলাচল করা কষ্টকর। গর্তের আকার বোঝাই মুশকিল। অনেক রাস্তায় গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, সড়ক সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গর্ত ভরাট করা হবে।
স্থায়ী কার্পেটিংয়ের বিষয়ে তিনি জানান, নগরীর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তাই সওজ-এর আওতাধীন থাকায় সব রাস্তা সিসিক করতে পারছে না। তবে, জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করতে আমরা গর্ত ভরাটের পাশাপাশি সওজ কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী সমাধানের তাগিদ দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে সিলেট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া জানান, সওজের রাস্তায় সিসিক উন্নয়ন কাজ চলমান রেখেছে। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে এসব কাজে আমাদের সম্মতি রয়েছে। শুধু সংস্কার নয়, নগরীর সবগুলো সড়কের কাজ তারা করবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান,বছরজুড়েই নগরীর বিভিন্ন জায়গায় সিসিকের বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ চলে। লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় এসব কাজ ঠিকমত মনিটরিং করা যায় না। এটা যে সিসিকের দায় তা হুট করেই বলা যাচ্ছে না। তবে কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে আমরা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রাজস্ব কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যেহেতু এটি প্রকৌশলী শাখার কাজ সে ক্ষেত্রে এ কমিটি তদন্ত করে নির্ধারণ করবে কারো কোন গাফিলতি আছে কি না। যদি কারো কোন গাফিলতি থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন