জহিরুল ইসলাম মিশু: অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল এর অনুরোধে অবশেষে ১৬৩ ঘণ্টা পর ‘আমরণ অনশন’ ভাঙলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শিক্ষার্থী। আন্দোলনের ১৩ তম ও অনশনের ৮ম দিনে বুধবার ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক একে একে সবাইকে পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বুধবার ভোরে শিক্ষার্থীরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এলেই অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপস্থিতিতে সকালে একযোগে অনশন ভাঙবেন তারা। তার আগে জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সঙ্গে আলোচনার সময় এই প্রতিশ্রুতি দেন ক্যাম্পাসে অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে আসেন শাবির সাবেক অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী (সাবেক অধ্যাপক) ইয়াসমিন হক।
আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় জাফর ইকবাল জানান, উচ্চ পর্যায়ে তার আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। এ কারণেই তিনি ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন। অনশন না ভাঙিয়ে তিনি ফিরে যাবেন না।
জাফর ইকবালের অনুরোধে অবশেষে অনশন ভাঙতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর পর ড. জাফর ইকবাল বলেছেন, দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে সরকারের উচ্চমহল। এই আশ্বাস বাস্তবায়ন করা না হলে সেটি হবে বিশ্বাসঘাতকতা।
জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের অনেক উচ্চমহল থেকে কথা বলেছে। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নাই।
আমাকে যে কথাটা দিয়েছেন তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে বুঝে নেব তারা শুধু ছাত্রদের সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গে এবং এই দেশের যত প্রগতিশীল মানুষ আছে সবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কাজেই আমি আশা করব তারা যেন আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো রাখেন।
উপাচার্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের এ রকম মেরুদণ্ডহীন হওয়ার কোনো কারণ নাই। অনশন ভাঙার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। তবে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখার অবস্থান থেকে এখনও সরে আসিনি। এ ব্যাপারে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন পদত্যাগ নয়, সমঝোতার মাধ্যমে ছুটিতে যাচ্ছেন বলে গুন্জন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়ার দাবী ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মঙ্গলবার রাত থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি বিকালে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক। এ ঘটনায় পরদিন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি এখন ঘটনার তথ্য ও ভিডিও চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
আজ সিলেটের একটি স্থানীয় পত্রিকায় তদন্ত কমিটির আহবায়ক শাবির স্কুল অব ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু ও যথাযথ তথ্য উদঘাটনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে প্রকৃত তথ্য ও প্রমাণাদি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করছে। ১৬ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য এবং ভিডিওক্লিপ আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ডিন, ফিজিক্যাল সায়েন্সেসের অফিস কক্ষের সামনে রক্ষিত বক্সে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। বক্তব্য অথবা তথ্যসমূহ bschall2022@sust.edu এই ইমেইলে প্রেরণ করা যাবে। এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর বক্তব্য পিডিএফ করে বর্ণিত ইমেইলে প্রেরণ করতে হবে। তথ্য প্রদানকারীর নাম, ঠিকানা, পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।