গত দুই বছর কোভিড-১৯ এর কারণে ঈদ যাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও এবার নয়া স্বাভাবিকতায় ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে বলেই মনে করা হচ্ছে।অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে দুর্ভোগে পড়তেই হবে—এটি যেন নিয়তি। পবিত্র ঈদুল ফিতর দোরগোড়ায়।কয়েক দিন বাদেই রাজধানীর লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে । সবার যাত্রা নির্বিঘ্ন হোক, এটি আমাদের প্রত্যাশা। দুর্ভাগ্যজনক যে প্রতিবছর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা পূরণ হয় না। ঈদ যাত্রার শুরু থেকেই মানুষ পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ, বাস-লঞ্চে বাড়তি ভাড়া, তীব্র যানজট—এসব ঝক্কি পেরিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়। তার পরও পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
ঈদ উৎসবে মানুষ বাড়িতে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।সুযোগটি কাজে লাগায় কালোবাজারিরা।তিনগুণের বেশি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।কালোবাজারিদের বেশিরভাগ দেখা যায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে।গাবতলী কিংবা বড় ধরনের টার্মিনালগুলোতে দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। রাস্তায় আটকিয়ে যাত্রীদের টাকা পকেটে হাতিয়ে নিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করাই তাদের পেশা। চুরি, রাহাজানি তো আছেই। ঈদে অনেকেই অনেক টাকা-পয়সা নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে রওনা হয়। কিন্তু ডাকাত কিংবা চোরের খপ্পরে পড়ে নিজের সর্বত্র হারাতে হয়।এ রকম কর্মকাণ্ড এড়াতে বড় বড় টার্মিনালে পুলিশ,র্যা বের বুথ স্থাপন করতে হবে, যাতে তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া যায়। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে।
সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। যানজট নিরসনে প্রশাসনকে ভূমিকা পালন করতে হবে। চাঁদাবাজি ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য নির্মূল করতে হবে। সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়ক আইন আছে; কিন্তু তা মানা হয় না। আইন মানার বিষয়ে সচেতন করতে পরিবহন মালিকদের নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে মতবিনিময় করতে পারে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ও সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। বাস ও ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি, ধীরগতিতে ট্রেন চলা, ভাঙাচোরা পথ, গাড়ির ঘন ঘন গতিহীন হয়ে পড়া, যানজট ইত্যাদি যাত্রীদের অবর্ণনীয় কষ্টের কারণ।
এ থেকে রক্ষা পেতে হলে সড়ক আইন মানা জরুরি। ঈদ এলেই যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে শুরু হয় সব মহলের ব্যস্ততা। কিন্তু একসঙ্গে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ার কারণে গণপরিবহনে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে ঈদ যাত্রায় দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। তাই প্রয়োজন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ। লঞ্চ, বাস ও ট্রেন—এই তিন মাধ্যমে মানুষ বাড়ি ফেরে। এসব পরিবহনের সঙ্গে যতগুলো দপ্তর জড়িত সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।ঈদের আগে ও পরে অন্তত এক সপ্তাহ গণপরিবহন ছাড়া অন্য পরিবহনের চলাচল বন্ধ করতে হবে।ঈদের অন্তত সপ্তাহখানেক আগে পরিবারের অন্যান্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পরিকল্পনা করে থাকে সরকার।ঈদে ঘরমুখো মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। বাস কাউন্টারে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শিডিউল বিপর্যয়ে আগের দিনের ট্রেন পরের দিন স্টেশন ছেড়ে যায়। লঞ্চে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়।এবছর ঈদ যাত্রা যাতে দুর্ভোগপূর্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফিটনেসহীন গাড়ি, নসিমন-করিমন, ইজি বাইক, অটোরিকশা, ব্যাটারি ও পেডাল চালিত রিকশা এবং মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। ঈদের লম্বা ছুটি পরিকল্পিতভাবে রেশনিং পদ্ধতিতে নিশ্চিত করা গেলে ভোগান্তি কমানো সম্ভব।
ঈদের সময় সড়কে নৈরাজ্য আরো বেড়ে যায়। মুনাফার লোভে পরিবহন সংস্থাগুলো চালকদের অনেক বেশি কাজ করতে বাধ্য করে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনও সড়কে বেশি নামানো হয়। কিছু ট্রেনের বগি বাড়িয়ে, কিছু ভাঙা সড়কে নামমাত্র সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়ে তারা দায়িত্ব শেষ করে। সড়ক, ট্রেন ও নৌপথে বেশি মানুষ চলাচল করে। সব পরিবহন সংস্থা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক-মহাসড়কের মেরামতকাজ ঈদের সাত দিন আগে শেষ করতে হবে। কিছু টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঈদ যাত্রা একটি মানবিক এবং ধর্মীয় প্রশ্ন, ধর্মীয় উৎসবের বিষয় বিশেষভাবে জড়িত। এটি পরিবহন মালিক সমিতিকে আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। রাজপথে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি কম। এ সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। আছে অজ্ঞান পার্টিও। দূরত্বের পথে জনমানবহীন রাজপথে ব্যারিকেড দিয়ে চলে গণডাকাতি। প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে এবং নৈতিক দায়িত্বের পরিচয় দিতে হবে।
ঈদ যাত্রার ভোগান্তির কথা শুনলে সব আনন্দ মাটি হয়ে যায়। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা। ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান, জরাজীর্ণ বাস, খানাখন্দে ভরা সড়ক বড় সমস্যা। প্রশাসকদের উচিত এগুলোর দিকে নজর বাড়ানো।ঈদ এলেই লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোকে রাস্তায় নামানো হয়। এগুলো প্রায় সময় বিকল হয়ে রাস্তায় আটকে পড়ে থাকে আর যানজট সৃষ্টি করে। এসব গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না।রাস্তার কাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে হবে। যানজটের কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রেনের বগিসহ ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন। টিকিট কালোবাজারি রোধ করতে হবে।রাজধানীর গণপরিবহণ যেন কোন অবস্থাতেই ঢাকার বাইরে যাত্রী নিয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ সাংবাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বাড়ি ফিরতে না পেরে রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। প্রতি বছরই ঈদের আগে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে থাকেন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে তার কথার প্রতিফলন দেখা যায় না।
ঈদের এখনও বেশ কয়েক দিন বাকি রয়েছে। আমরা আশা করব, এখন থেকেই কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করে সড়কের যেসব জায়গায় সমস্যা রয়েছে, সেসব জায়গায় বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হবে। গাড়ির মালিক ও চালকরাও যাতে সড়ক আইন মেনে চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, সে ব্যাপারেও আমরা জোর তাগিদ দিতে চাই।
সাংগঠনিক সম্পাদক, নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কমিটি।