এস এম আজাদ হোসেন: দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও দীর্ঘদিনের নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর ইলিয়াস কাঞ্চন এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করলেন রাজনীতির ময়দানে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে শুরু হলো এই নতুন যাত্রা।
দলটির মূল স্লোগান-“গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ”। এ যেন তার দীর্ঘদিনের সামাজিক আন্দোলনের রাজনৈতিক অনুবাদ। ইলিয়াস কাঞ্চন হয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান, আর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
তারকাখ্যাতি থেকে রাজনীতির অঙ্গনে
বাংলা সিনেমার রুপালি পর্দায় যিনি দীর্ঘকাল ধরে নায়ক হিসেবে মানুষের মন জয় করেছেন,তিনিই এখন বাস্তব জীবনের রাজনীতির মঞ্চে। তবে তার এই রূপান্তর হঠাৎ নয়। ১৯৯৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার, এবং ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব ছিল দৃশ্যমান ও শক্তিশালী। অনেক তরুণের চোখে তিনি হয়ে ওঠেন দায়িত্ববান নাগরিক নেতৃত্বের প্রতীক।
কেন এই সময়?
দেশ যখন রাজনৈতিক বৈরিতা,নেতৃত্বহীনতা ও আস্থাহীনতায় আক্রান্ত,তখন ইলিয়াস কাঞ্চনের রাজনৈতিক উদ্যোগকে অনেকে দেখছেন একটি ‘আলাদা ধারার’ প্রয়াস হিসেবে। সাংবাদিক শওকত মাহমুদের যুক্ত হওয়া এই উদ্যোগকে একটি পরিপক্ব ও চিন্তাশীল রাজনৈতিক সংগঠনে রূপ দিতে পারে-এমনটাই ধারণা বিশ্লেষকদের।
দলের ঘোষিত লক্ষ্য-“মুক্তিযুদ্ধ ও ’৭১-এর চেতনায় বিশ্বাসী থেকে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা”। এই বক্তব্যে স্বাধীনতার মূল মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতি যেমন স্পষ্ট, তেমনই বর্তমান সময়ের বৈষম্য, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাবের প্রতিক্রিয়াও ফুটে ওঠে।
‘জনতা পার্টি’: কাদের জন্য?
এই প্রশ্নটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। আদতে কী ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিক, তরুণ সমাজ, নাগরিক আন্দোলনের কর্মীরা, না কি রাজনীতিতে হতাশ একটি প্রজন্ম-তাদের জন্যই কি এই দল? নিজেকে মূলধারার বাইরে এবং ভিন্নচিন্তার শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় এই সংগঠন, যারা রাজনীতিতে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা ও মূল্যবোধের প্রাধান্য দিতে চায়।
এও লক্ষণীয়, দলটি আত্মপ্রকাশের দিনেই রাজনৈতিক ‘আচরণবিধি’ ঘোষণার ঘোষণা দেয়নি, বরং তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ ও সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলমান বলে জানানো হয়। এতে বোঝা যায়, তারা হুট করে রাজনীতির মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেয়ে ধাপে ধাপে ভিত্তি গড়তে চায়।
পরিণতি কী হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার-ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘জনতা পার্টি’ ইতিমধ্যেই একটি বার্তা দিয়েছে যে, রাজনীতিতে নতুন মানুষের আগমন এখনো সম্ভব। এখন দেখার বিষয়-এই নতুন উদ্যোগ শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে, না কি সত্যিকার অর্থেই রাজনীতির জগতে প্রভাব ফেলতে পারবে।
দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে যখন পরিবর্তনের আগ্রহ প্রবল, তখন এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব অনেককে আশাবাদী করলেও বাস্তবতা হলো-এটি এক দীর্ঘ,বন্ধুর পথ। তবে শুরুটা যদি ইনসাফের ডাক দিয়ে হয়,শেষটা হয়তো হতে পারে এক নতুন ভোরের দিকে।
লেখক: কলাম লেখক, সমাজকর্মী।