মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবলীলা বিশ্বব্যাপী এখনও প্রবল প্রতাপে চলছে।নয় মাসের অধিক সময় ধরে চলমান এ আগ্রাসনের শেষ কবে হবে তা এখনো অজানা। প্রথম আক্রান্তের সাড়ে ৯ মাস পরে এসে আমরা যদি শুধু সেপ্টেম্বর ২০২০ মাসের হিসেব করি অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর’২০ সকাল ১০টা থেকে ০১ অক্টোবর’২০ সকাল ১০টা পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী ৩০ দিনে বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ লাখ ২৪ হাজার ৯০৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৬৫ জন করে।যেখানে আগস্ট মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৭৬ লাখ ২৭ হাজার ৩১০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৪ জন করে। তার মানে দাড়ালো গত ৩০ দিনে বিশ্বে করোনা সংক্রমণ কোনভাবেই কমেনি বরং ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
সেপ্টেম্বরে ৩০ দিনে মোট মৃত্যু ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৮ জনের যা প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ৪৬৮ জন করে।যেখানে আগস্ট’২০ মাসে মোট মৃত্যু ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮০ জনের বা গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু ছিল ৫ হাজার ৫৮৬ জন করে।অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস থেকে আগস্ট মাসে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যু সামান্য কমেছে।
তবে এই একমাসে করোনার থাবা কোন কোন দেশে বেড়েছে আশংকাজনকহারে।আবার কোন কোন দেশে কমেছেও।সেপ্টেম্বর এর প্রথমদিন আক্রান্তের ক্রমানুসারে প্রথম বিশটি দেশ সেপ্টেম্বর এর শেষ দিনে এসে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে গেছে। যেমন সেপ্টেম্বর এর প্রথমদিনে প্রথম ২০টি দেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, পেরু, সাউথ আফিকা, কলোম্বিয়া, মেক্সিকো, স্পেন, আর্জেন্টিনা, চিলি,ইরান, যুক্তরাজ্য,সৌদিআরব,বাংলাদেশ,পাকিস্তান,ফ্রান্স,তুরস্ক,ইতালী ও জার্মানী ইত্যাদি।
কিন্তু ১ অক্টোবর এসে এচিত্রে বেশ রদবদল ঘটেছে।তালিকার সর্বোচ্চ স্থানে যুক্তরাষ্ট্র থাকলেও দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিলকে টপকে ভারত উঠে এসেছে।ব্রাজিল ৩য় স্থানে ও রাশিয়া চতুর্থ স্থানে স্থির থাকলেও অন্যান্য অবস্থানে রদবদল হয়েছে। এরপর যথাক্রমে আছে কলোম্বিয়া, পেরু, স্পেন, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, সাউথ আফিকা, ফ্রান্স, চিলি, ইরান, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ, ইরাক, সৌদিআরব, তুরস্ক, ইতালী ও পাকিস্তান।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, স্পেন, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমন সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে।এদিকে আগস্টে শীর্ষ বিশে ইরাক না থাকলেও সেপ্টেম্বরে উঠে এসেছে ১৬ নম্বরে।
এবার যদি একনজরে ৩০দিনে শীর্ষ ২০টি দেশের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানটা দেখি-
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪১ হাজার ১৮৩ জন করে।
ভারতে ৩০ দিনে ২৬ লাখ ২২ হাজার ৩১৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৮৭ হাজার ৪১১ জন করে আক্রান্ত হয়েছে।অর্থাৎ গত এক মাসে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি আক্রান্ত বেড়েছে ভারতে।
৩০ দিনে ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ২ হাজার ৬৮৫ জন বা প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার ৮৯ জন করে।
রাশিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৬৭ জন।যা প্রতিন গড়ে ৬ হাজার ৩২ জন করে।
কলম্বিয়ায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার ১৫০ জন করে।
পেরুতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৯২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ৪২৬ জন করে।
স্পেনে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ২১১ জন করে।
আর্জেন্টিনায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৬ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১১ হাজার ১০৮ জন করে।
মেক্সিকোতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৩২২ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৭৪৪ জন করে।
সাউথ আফ্রিকায় ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ২৯৮ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩৯৬ জন।
ফ্রান্সে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৫১০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৯ হাজার ৪১৭ জন করে।গত এক মাসে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
চিলিতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ হাজার ২৬৫ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৭০৯ জন করে।
ইরানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ৭৩৪ জন করে।
যুক্তরাজ্যে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৯১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৯১৩ জন করে।গত এক মাসে যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৪৮৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৬৮৩ জন করে।
ইরাকে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৮১ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫৭৩ জন করে।গতমাসে ইরাক প্রথম বিশে ছিলনা। এক মাসে ইরাকে করোনা আক্রান্তের সখ্যা দ্রুত বেড়েছে,মনে হচ্ছে দু’একদিনের মধ্যে ইরাক আক্রান্তে বাংলাদেশকে টপকাবে।
সৌদি আরবে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৮৩৩ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৬২৮ জন করে।
তুরস্কে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৩০ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৬১৮ জন করে।
ইতালীতে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার ২৪৭ জন বা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২২ জন করে।গত এক মাসে ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২গুণ বেড়েছে।
পাকিস্তানে ৩০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৪১৪ জন বা গড়ে প্রতিদিন ৫৪৭ জন করে।
বাস্তবতা হলো, ভাইরাসটি সহজেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে না এনেই যদি সবকিছু সচল করে স্বাভাবিক করা হয় তাহলে তা হবে ভয়াবহ একটি বিপর্যয়।এমনটিই জানালেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধগুলো জারি রাখতে হবে।
শেষ কথা হল,কোনো দেশই আগাম এমনটা বলতে পারে না মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়ে গেছে।
লেখকঃ সাংবাদিক,সমাজকর্মী।
সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাস থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে দিনে গড়ে ৩০ হাজার জন করে
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন