একজন ইরানি নারী দাবা খেলোয়াড় হিজাব ছাড়াই একটি আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় আরব নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর হিজাব ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মুষ্টিমেয় নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এই দাবাড়ু হলেন সর্বশেষ।
ড্রেস কোড না মানার অভিযোগে কুর্দি মেয়ে মাহশা আমিনিকে (২২) গ্রেফতার করেছিল ইরানের পুলিশ। হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশটির ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। ইরানের কঠোর ড্রেস কোড অনুযায়ী নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে হয়।
দেশটির সংবাদ মাধ্যম খবর ভার্জেশি ও এতেমাদ গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) জানায়, সারা খাদেম কাজাখিস্তানের আলমাটিতে এফআইডিই ওয়ার্ল্ড র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে হিজাব ছাড়াই প্রতিযোগিতা করেন।
মিডিয়ায় প্রকাশিত দুইটি ছবিতে টুর্নামেন্টে হিজাব ছাড়াই সারাকে দেখা গেছে। খবর ভার্জেশি অবশ্য সারার হিজাব পরা ছবিও প্রকাশ করেছে। তবে এটি ওই টুর্নামেন্টেই তোলা তার ছবি কি না সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
টুর্নামেন্ট বা প্রকাশিত খবর নিয়ে সারার ইনস্টাগ্রামে কিছু বলা হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স সরাসরি বার্তার মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেননি।
সারা ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সরসাদত খাদেমালশারেহি নামেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সারার অবস্থান ৮০৪তম। ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা টুর্নামেন্টের প্রতিযোগী হিসেবে তিনি ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
ইরানে চলমান বিক্ষোভে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অনেককে তাদের হিজাব খুলে তাতে আগুন দিতেও দেখা গেছে। ইরানের কয়েকজন ক্রীড়াবিদ ও নারী এই প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
অক্টোবরে ইরানি পর্বতারোহী এলনাজ রেকাবি দক্ষিণ কোরিয়ায় হিজাব ছাড়াই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। যদিও পরে তিনি জানিয়েছেন, তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজটি করেছেন।
একজন ইরানি তীরন্দাজ জানিয়েছেন, তিনি নভেম্বরে তেহরানে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার হিজাব খুলেছেন। ভিডিওতে তার হিজাব পড়ে যেতে দেখা যায়। তবে এই ঘটনাকে অনেকেই প্রতিবাদের সমর্থন হিসেবে দেখছেন।
নভেম্বরে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমকে ইরানের উপক্রীড়ামন্ত্রী মারিয়াম কাজেমিপোর জানান, কিছু নারী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ করেছেন। পরে তারা তাদের কাজের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ইরানের কর্তৃপক্ষ চলমান বিক্ষোভ দমন করে চলেছে।
অ্যাক্টিভিস্টদের পরিচালিত এইচআরএএনএ বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) এই বিক্ষোভে ৬৯ শিশুসহ ৫০৭ জন নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৬ সদস্যও নিহত হয়েছেন। তবে সরকারি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন।