বডিবিল্ডার জাহিদের নিষেধাজ্ঞা এখন ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু। এই ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তার আগে আজ শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাহিদ হাসান শুভকে আজীবন নিষিদ্ধ ও বহিস্কার করার বিষয়ে বিস্তারিত জানায় বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মিস্টার বাংলাদেশ নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
‘আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছি, যা কখনোই কারও কাম্য ছিল না। গত ২০ থেকে ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শেখ কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় শরীরগঠন প্রতিযোগিতা-২০২২। প্রতিযোগিতার শেষ দিন অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর মেনস ফিজিক ডিভিশনের ১৭০ সে. মি. দৈহিক উচ্চতা শ্রেণিতে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সনদপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ ১১ জন বিচারকের রায়ে দ্বিতীয় হন জাহিদ হাসান শুভ/কাজল। কিন্তু ফলাফল মেনে নিতে না পেরে শত শত অডিয়েন্স এবং নারী ও পুরুষ বডিবিল্ডারদের সামনেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অশ্লীল দেহভঙ্গির মাধ্যমে বদ ও অশ্লীল আচরণ করেন। তার এই বদ আচরণ বডিবিল্ডিং তথা ক্রীড়াঙ্গনকে কলুষিত করেছে। ফলে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং ফেডারেশন (আইএফবিবি) ও বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের (বিএবিবিএফ) গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাকে আজীবন বহিস্কার করতে বাধ্য হই আমরা। পরবর্তীতে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি নানা মিথ্যাচার করেছেন। যা নিয়ে আজ আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন।
প্রথমত,
আমরা নাকি তাকে ধাক্কা দিয়ে স্টেজ থেকে নামিয়ে দিয়েছি। এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আসলে পুরস্কার গ্রহণের পর সে আমার কাছে মাইক্রোফোন চায়। তখনও প্রথম স্থান অধিকারকারীকে পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং নিয়ম ও কনভেনশন না থাকাতে তাকে পরবর্তী সময়ে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করতে মঞ্চের ডান উইং-এ যাওয়ার জন্য অঙ্গুলি নির্দেশনা দিই আমি।
দ্বিতীয়ত,
পুরস্কার গ্রহণের পর স্টেজের ডান উইং-এ দাঁড়িয়ে পুরস্কার ছুড়ে ফেলে এবং লাথি মেরে নিজের সম্মানকেই ভুলুণ্ঠিত করেছেন। জাহিদ হাসান শুভ এখানেই থামেননি, শত শত অডিয়েন্স এবং নারী ক্রীড়াবিদদের সামনেই চেয়ারে উঠে ট্রফি নিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছেন। যা কোনোভাবেই একজন ক্রীড়াবিদের আচরণের সঙ্গে মানায় না। তার এমন অশ্লীল এবং অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গিতে লজ্জিত ও ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েন নারী বডিবিল্ডাররা। এমনকি জাহিদের বিষয়ে শাস্তিও দাবি করেন তারা। যার প্রেক্ষিতে বডিবিল্ডারদের আচরণগত বিষয়টি ভেবে, ভবিষ্যতে নারী বডিবিল্ডারদের লজ্জায় না ফেলতে এবং ভবিষ্যতে ক্রীড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাহিদ হাসান শুভকে আজীবন বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাহিদ হাসান শুভ’র অশালীন আচরণ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। অনেকেই তার দ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টি নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করছেন। মেনস ফিজিক বডিবিল্ডিং টেকনিক্যাল বিষয়, যা চারটি পোজ বিচার করে মার্কিং করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে জাহিদ মিথ্য তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
আমাদের প্রশ্ন, ১১ জন বিচারকের সবাই কি তার বিপক্ষে ছিলেন? আমরা কেনইবা চাইবো একজন বডিবিল্ডারকে ইচ্ছে করে রানার-আপ করতে? এর আগে তিনি চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, তখন তো আপনারা কেউ কিছুই বলেনি। জাহিদ নিজেও কোনো কথা বলেননি। এখন একজন যোগ্য বডিবিল্ডার চ্যাম্পিয়ন হওয়াতেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন জাহিদ। এটা ক্রীড়াসুলভ আচরণ নয়। বিষয়টি কারও কাম্য নয়। আমাদের মতে, তার এমন অশালীন আচরণ হয়তো বরদাস্ত করবেন না ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ সংস্থার কর্মকর্তাগণও।
চতুর্থত,
শুভ বলে বেড়াচ্ছেন যিনি প্রথম হয়েছেন তিনি আমার মেয়ে জামাই। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমার কোনো মেয়েই নেই। মেয়ে জামাই আসবে কোথা থেকে?
গত বেশ কদিন ধরেই শুভর বিষয়টি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এবং মিডিয়ায় বেশ আলোচিত হচ্ছে। সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আপনারা জাতির বিবেক। আপনাদের লেখনিতেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের বিশ্বাস, শুভর অশালীন মন্তব্য ও আচরণকে আপনাদের বিবেচনায় রাখবেন। ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সুশৃঙ্খল রাখতে আমাদের সিদ্ধান্তকে আপনারা স্বাগত জানাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।