রজার ফেদেরার, অ্যান্ডি মারের পর নাদাল; ফেভারিট ফোরের তিনজনই টেনিসকে বিদায় বলে দিলেন। বাকি রইলেন শুধু নোভাক জোকোভিচ। ২৪ গ্র্যান্ড স্লাম জেতা জোকোভিচ এখন নিশ্চিত কোর্টে নেমে চ্যালেঞ্জের অভাব অনুভব করবেন। সমর্থকরাও আর কোর্টে এসে নাদালকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হবে। আধুনিক টেনিসও নিঃসন্দেহে সৌন্দর্য হারাবে। রোলাঁ গারোর আয়োজকরাও এখন আর নাদালকে না পেয়ে মন খারাপ করতেই পারেন। কারণ লাল সুরকির এই কোর্টে দাপিয়ে বেড়িয়ে বিশ্বের কাছে নাদাল নিজেকে চিনিয়েছেন। এখানে ১১৬ ম্যাচ খেলে জিতেছেন রেকর্ড ১১২টিতে। হেরেছেন মাত্র চারটি, যার একটি সর্বশেষ আসরের প্রথম রাউন্ডেই আলেক্সান্ডার জিভরেভের কাছে, যা মানতে পারেনি তাঁর ভক্তকুল।
যে কোর্টে নাদালের রাজত্ব, সেখানে শুরুতেই তাঁর বিদায় ছিল অনেক বেদনাদায়ক। প্যারিসে তাঁর জয়ের সাফল্যের হার ৯৬.৫ শতাংশ, যা কোনো গ্র্যান্ড স্লামে একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ। এই কোর্টে আরেকটি অবিশ্বাস্য কীর্তি আছে নাদালের। ২০০৮, ২০১০, ২০১৭ ও ২০২০ সালে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের পথে একটি সেটও তিনি হারেননি। এই টুর্নামেন্টে জিভরেভ ছাড়া তাঁকে হারাতে পেরেছেন আর মাত্র দুজন। একজন নোভাক জোকোভিচ। ২০১৫-এর কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০২১-এর সেমিফাইনালে নাদালকে হারের স্বাদ দেন দুই ডজন গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সার্বিয়ান এই তারকা। আর ২০০৯ সালে চতুর্থ রাউন্ডে নাদালকে হারিয়ে দেন রোবিন সোডারলিং।
টেনিস ঈশ্বর নাদালকে দুই হাত ভরে সাফল্য দিয়েছেন। ফ্রেঞ্চ ওপেন ছাড়াও ইউএস ওপেন চারবার, অস্ট্রেলিয়ান ও উইম্বলডনের মুকুট মাথায় পরেছেন দুইবার করে। রজার ফেদেরার কিংবা জোকোভিচের চেয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ নাদালকে নিখুঁতের মানে খানিকটা পিছিয়েই রেখেছেন, কিন্তু নাদালের সাফল্য সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর সাফল্যকে কেউ এড়িয়ে যেতে দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম, অলিম্পিকে একক ও ডাবলসে সোনা, ২০৯ সপ্তাহ ধরে র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ১ নম্বর জায়গা দখল করে রাখা, টানা ৮১টি ম্যাচ সুরকির কোর্টে অপরাজিত থাকা নাদাল নিঃসন্দেহে বিশ্বের সর্বকালের সেরাদের একজন। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে নাদাল জিতেছেন ৯২টি শিরোপা, টেনিসের উন্মুক্ত যুগে যেটা পঞ্চম সর্বোচ্চ। লম্বা সময় ধরে রজার ফেদেরারের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরপর জোকোভিচের সঙ্গেও হয়েছে ধ্রুপদি লড়াই।
শুধু টেনিস বিশ্বের নয়, স্পেনের সেপার্টিং আইকন হিসেবেও নিজেকে সামনে এনেছেন নাদাল। অলিম্পিকে দেশকে এনে দিয়েছেন সোনার পদক। জড়িত আছেন স্পেনের ক্রীড়া ক্ষেত্রের নানা ইভেন্টের সঙ্গে। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের একনিষ্ঠ ভক্তের সঙ্গে ক্লাবটির সদস্যও তিনি। ছোটবেলায় যে তিনি ফুটবলারই হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চাচা টোনি নাদাল তাঁকে টেনিসের প্রেমে ফেলেছিলেন। এরপরের গল্প তো কারোরই অজানা নয়।
খেলোয়াড়ি জীবনে সাফল্য পাওয়া নাদাল স্পেনে নিজের নামে গড়েছেন টেনিস একাডেমি, যেখানে তৈরি হচ্ছেন হালের কার্লোস আলকারাজ কিংবা ইয়ানিক সিনারের মতো ভবিষ্যৎ তারকা। টেনিসের র্যাকেট তুলে রাখার পর ফুটবলে সংগঠক হিসেবে নাদালকে দেখা যাবে—এমন সম্ভাবনাই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু টেনিসের মায়া নাদাল যে কখনোই ছাড়তে পারবেন না। টেনিস ঈশ্বরও হয়তো নাদালের ছায়া এড়াতে পারবেন না।