হাওরের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বিদেশে রপ্তানি যোগ্য ডিজিটাল প্রযুক্তি শিল্পের উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান, এমপি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশার প্রত্যন্ত গ্রাম আহমেদপুরে এডভান্স অ্যাপ, বাংলাদেশ নামে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিল্পে ৪৮জন আইটি প্রকৌশলী ও প্রোগ্রামার কাজ করছেন। এখান থেকে উৎপাদিত সফটওয়্যারসহ ডিজিটাল পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হবে।মন্ত্রীদ্বয় প্রত্যন্ত হাওরে একটি সফট্ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
গতকাল শনিবার রাতে এডভান্স অ্যাপ, বাংলাদেশ আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এই ঘটনাটিকে দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদ্বয় দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ উদ্যোগ সমূহের প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, নেত্রকোণা থেকে মোহনগঞ্জ, ধর্মপাশা ও তাহেরপুর হয়ে হাওরের উপর দিয়ে সাড়ে তের কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে হাওরবাসির জীবনমান পাল্টে যাবে। তিনি একই সাথে জানান যে সিলেট থেকে নেত্রকোণা ট্রেন লাইন স্থাপনের কাজও করা হবে। তৈরি হবে দিরাই থেকে শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাবার মহাসড়ক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, হাওর, দ্বীপ ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকার ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, কাউকে বাদ রেখে নয়, উন্নয়নে সকলের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্ঞান ভিত্তিক একটি ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত এগারো বছরে হাওরসহ দেশের পিছিয়ে থাকার জনগোষ্ঠীসহ দেশের রূপচিত্র পাল্টে গেছে।করোনাকালেও মানুষের জীবনযাত্র থেমে থাকেনি।এটাই হচ্ছে ২০২০সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাড়ে তের কিলোমিটার উড়াল সড়ক চালু হওয়ার পর হাওরবাসির জীবনমান পাল্টে যাবে। যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন ছাড়াও পর্যটকদের কাছে এটি হবে একটি আকর্ষণীয় স্পট।এই অঞ্চলটি মালদ্বীপের চেয়েও আকর্ষণীয় হবে পর্যটকদের কাছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী হাওরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত কর্মসুচি তুলে ধরে বলেন, নেত্রকোণায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জে কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি এবং কিশোরগঞ্জেও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, ভৈরব ব্রিজ থেকে উত্তরে গারোপাহাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার শতকরা ৯৫ ভাগের্র বেশী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে এবং তার কন্যাকে নিজেদের প্রাণের মতো ভালবাসে।
বঙ্গবন্ধু কন্যাও তাদেরকে ভালবাসা দিতে ভুলেননি। ২০১৭ সালের বন্যায় হাওরের অসহায় মানুষকে শান্তনা দিতে তিনি খালিয়াজুরী ও শাল্লাসহ হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গিয়েছেন। গ্রামের মানুষটির সাথেও কথা বলেছেন।মন্ত্রী নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, যেখানকার মানুষ একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর হাইস্কুলে পড়ার সুযোগ পেত না। ইটনা, অষ্টগ্রাম ও খালিয়াজুরীসহ হাওরের শিক্ষার্থীদের সূদুর আজমিরিগঞ্জ গিয়ে হাইস্কুল পড়তে হতো।আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী সেই অবস্থা থেকে হাওরবাসির জীবনমান বদলে দিয়েছেন।এখন হাওরের ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসে ইন্টারনেটে বিদেশী ডলার আয় করতে পারছে। আজ হাইস্কুল, কলেজ পড়ার জন্য বিশ কিলোমিটার পথ আর পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় না।অথচ মাত্র একদশক আগেও হাওরবাসি তাদের দুর্ভাগ্য লাগবে সরকারের সহযোগিতা পাবে তা চিন্তাও করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব এগিয়ে নিতে জনাব মোস্তাফা জব্বারকে প্রধানমন্ত্রী‘র এক সুযোগ্য ডিজিটাল সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, হাওরের প্রত্যন্ত গ্রামেও ডিজিটাল হাব হচ্ছে কিংবা হাওর থেকে ওয়েবিনার সম্মেলন করা হচ্ছে এটা সত্যি অভাবনীয়। সুব্রতদাস খোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অ্যাডভান্স অ্যাপস, বাংলাদেশ এর সিইও শফিউল আলম বিপ্লব আলোচনায় অংশ নেন।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন