ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের বিশাল জনসম্পদ অন্তর্ভূক্ত রাখার মাধ্যমে যাতে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা করতে হবে। ড্রাইভার বিহীন গাড়ি কিংবা শ্রমিক ছাড়া পোষাক কারখানা উন্নত বিশ্বের জন্য আনন্দের কিন্তু আমাদের জন্য সেটা অমানবিক, অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয় । কাজেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়ে অন্যদের অনুসরণ না করে বাংলাদেশের নিজস্ব আলোকে এই বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা অপরিহার্য।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়েবিনার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (জনমিতি) তুলে ধরে বলেন, জার্মান ও জাপানসহ বিশ্বে অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বকারী দেশসমূহের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৬৫ভাগের বয়স ৬৫ বছর বা তার ওপরে। তাদের কোন কর্মক্ষমতা নেই। এজন্য তারা মানুষহীন শিল্প বিপ্লব চায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের শতকরা ৬৫ ভাগ জনগোষ্ঠীর বয়স ৩৫ বছরের নীচে। সেই বিবেচনায় উন্নত দেশগুলোর কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বিশাল সংকট বিরাজ করছে। অপরদিকে আমাদের বিশাল জনসম্পদকে উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজে লাগানোই হবে আমাদের বড় সুযোগ। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। আমাদের তরুণরা অত্যন্ত মেধাবি। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তারা সহজেই প্রযুক্তিকে আয়ত্ত্ব করতে পারে। আমাদের সন্তানদের একটু গাইড করলে তারা শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমাদের ছেলেরা মহাকাশ বিজ্ঞানে লেখাপড়া না করেও দক্ষতা এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করছে। প্রযুক্তি অ্যাডাপ্ট করার ক্ষমতা বাঙালি জাতির মতো কারো নেই বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। দেশের কম্পিউটার বিপ্লবের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইটিইউ এবং ইউপিইউ এর সদস্যপদ অর্জন এবং বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের যে বীজ বপন করে গেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর তা চারায় রূপান্তর করেছেন। তিনি কম্পিউটারের ওপর থেকে ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহার করে কম্পিউটারকে মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেন। তিনি মোবাইলের মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করে মোবাইল ফোন সাধারণের হাতে পৌঁছে দিতে চারটি মোবাইল অপারেটরকে লাইসেন্স প্রদান করেন। ভি স্যাটের মাধ্যমে দেশে অনলাইন ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেন। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অতীতে তিনটি শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ শরীক হতে পারেনি। শতশত বছরের পেছনে পড়া বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বের জায়গায় উপনীত হয়েছে। করোনাকালে বাংলাদেশ শিল্প বাণিজ্য ও টেলিমেডিসিনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল সেবা দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল। মন্ত্রী প্রযু্ক্তির লেটেস্ট ভার্সন ফাইভ জি প্রবর্তণে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। যেখানে ইন্ডাস্ট্রি করতে চান প্রযুক্তি পাবেন বলে শিল্প উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মবিন এর সভাপতিত্বে চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম,শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম পরাগ, এসএমই ফাউন্ডেশনের গবেষক সিরাজুল হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, প্রফেসর ড, রাশেদুর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক প্রফেসর ড. ফাত্তাহ, ডিসিসিআই এর সাবেক নেতা আতিক রাব্বানি, পাঠাও এর সিইও ফাহিম আহমেদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই নেতা শামস মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা টেলিকম বিভাগকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল মেরুদন্ড আখ্যায়িত করে বলেন, মানুষকে বাদ দিয়ে কোন প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য সঠিক হবে না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মানবিক করার মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করে বলেন সবার আগে মানুষ ও দেশ।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অন্যদের অনুকরণ নয়, বাংলাদেশের জনসম্পদ বিবেচনায় নীতিমালা অপরিহার্য: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন