দেশে টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের পর গত বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বাসাবাড়িতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সচল হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। এর মধ্যেই ডটবিডি ডোমেইনে কারিগরি জটিলতার কারণে অধিকাংশ সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। বন্ধ রাখা হয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি যোগাযোগমাধ্যম। যদিও ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে বিকল্প পথে এসব সাইটে প্রবেশ করছেন ব্যবহারকারীরা। তার পরও ইন্টারনেটের অত্যন্ত ধীরগতি ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। তার মধ্যেই বেড়েছে সাইবার হামলার আশঙ্কা। এর মধ্যেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশ এবং ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিল দ্য রেজিস্ট্যান্স নামের একটি গ্রুপ। দুই-তিন দিন পরে গ্রুপটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটও হ্যাক করে। দখলে নিয়ে সাইটগুলোর হোম পেজে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ছবিসহ কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে একাধিক বার্তা উল্লেখ করা হয়। এতে ছাত্র হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে লাল বর্ণে লেখা হয়, ‘এখন আর প্রতিবাদ নয়, এটা এখন যুদ্ধ’। ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে ‘অপারেশন হান্টডাউন’ নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলের সঙ্গে লিঙ্ক করা অবস্থা দেখা যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ছাত্রলীগের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। গুগল সার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইটের লিংকের নিচেই লেখা দেখা যায়– ‘হ্যাকড বাই দ্য রেজিস্ট্যান্স’। যদিও লিংকে ক্লিক করে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায়।
গতকাল তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক টিম সার্ট সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ব্রডব্যান্ড সংযোগ পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের একাধিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটাবেজগুলোতে সাইবার আক্রমণের অস্বাভাবিক ক্রমবর্ধমান হার পরিলক্ষিত হয়। হ্যাকার গ্রুপগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এদের মূল লক্ষ্যবস্তু সরকারি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ক্ষতিসাধন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি এবং সেবা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা। এ অবস্থায় সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশের ভোগান্তি বিষয়ে জানতে চাইলে ডটবিডি ডোমেইনের স্বত্বাধিকারী বিটিসিএল জানিয়েছে, তাদের ডোমেইনে এ সমস্যা নেই। এটুআই নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে এ জন্য ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, ডটবিডি যে সার্ভারে হোস্ট করা সেটি (বিডিআইএক্স) বন্ধ রাখায় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ইন্টারনেটের গতি কম
ব্রডব্যান্ড চালু হলেও ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্যবহারকারীরা। এ বিষয়ে একাধিক নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারগুলো বন্ধ রয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যান্ডউইথের ট্রাফিকও কমে গেছে। বাংলাদেশের জন্য ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ৬৩০০ জিবিপিএসের বেশি। এর মধ্যে তিন হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে। এই সেবা বন্ধ থাকায় পুরো চাপ পড়েছে ব্রডব্যান্ডের ব্যান্ডউইথের ওপর। এ ছাড়া স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারগুলো বন্ধ রাখায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মেটা ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানেরও ক্যাশ সার্ভার। গতকাল গুগলের ক্যাশ সার্ভার চালুর জন্য আইআইজি অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।
মোবাইল ইন্টারনেট ডেটার মেয়াদ
ইন্টারনেট বন্ধকালীন মোবাইল ডেটার মেয়াদ শেষ হলে কী হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মোবাইল অপারেটররা। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক জানায়, তারা এ বিষয়ে বিটিআরসি থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি।
বেড়েছে ভিপিএন ব্যবহার
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকলেও অনেকে ভিপিএন ব্যবহার করে এসব সাইটে ঢুকছেন। গতকালের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে গুগল প্লে-স্টোরে শীর্ষ ডাউনলোড করা ৫টি অ্যাপের মধ্যে ৪টিই ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিপিএন। মূলত যেসব দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ থাকে সেসব দেশেই মূলত ভিপিএনের ব্যবহার বেশি।