বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটক। বর্তমানে মানুষজন ফেসবুকের চেয়েও বেশি সময় ব্যয় করে থাকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরির এই প্ল্যাটফর্মে। জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মের বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি এবং প্রতিদিন অসংখ্য ভিডিও আপলোড করা হয়।
টিকটক তাদের নতুন ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, নিয়ম লঙ্ঘনকারী কনটেন্টগুলো প্লাটফর্মটি কিভাবে মোকাবেলা করে প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে।
‘টিকটক কমিউনিটি গাইডলাইনস এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্ল্যাটফর্মটি থেকে বিশ্বব্যাপী নীতিমালা ভঙ্গের কারণে প্রায় ৯ কোটি (৮ কোটি ৫৭ লাখ ৯৪ হাজার ২২২টি) ভিডিও অপসারণ করা হয়েছে, যা টিকটকে এ সময়ের মধ্যে আপলোড করা ভিডিওর প্রায় ১ শতাংশ।
প্রায় ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ ভিডিও কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘনের জন্য পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে, কোনো ব্যবহারকারী রিপোর্ট করার আগেই সরানো সম্ভব হয়েছে ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৯০ দশমিক ১ শতাংশ ভিডিও কোনো ভিউ পাওয়ার আগে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে এই সময়ে ভিডিও সরানো হয়েছে ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭২টি। ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিডিও সরানো হয়েছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে থেকে সরানো কনটেন্টের মধ্যে হয়রানি এবং বুলিং কনটেন্ট সরানো হয়েছে ১৪.৭ শতাংশ, ঘৃণ্য আচরণের জন্য ১০.১ শতাংশ, সহিংস চরমপন্থার জন্য ১৬.২ শতাংশ এবং বিপজ্জনক কাজের জন্য ৭.৭ শতাংশ কনটেন্ট অপসারণ করা হয়েছে। আর এই ভিডিওগুলোকে কেউ রিপোর্ট করার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ এসব ভিডিও ব্যবহারকারীদের রিপোর্টের মাধ্যমে প্রথম চিহ্নিত হয়নি বরং টিকটকের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করে মুছে দেওয়া হয়েছে, ফলে একটি ভিউ হওয়ারও সুযোগ পায়নি।
টিকটকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা, দয়া ও সহনশীলতার ভিত্তিতে টিকটকে আমাদের কমিউনিটি গড়ে তোলা উচিত। আমাদের নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষকে ইতিবাচক ডিজিটাল সংযোগ তৈরিতে সহায়তার জন্য আমরা বদ্ধ পরিকর। আমরা চাই আমাদের ব্যবহারকারী নিজেদের মধ্যে সদাচার ও সম্প্রীতি বজায় রাখুক। মানুষকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে নিয়মের তো কোনো শেষ নেই। আমাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি এটাই দেখায় যে, আমরা কমিউনিটির কল্যাণের প্রতি সদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘন করে এমন অপমানজনক এবং ঘৃণ্য কনটেন্ট বা আচরণকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারণ করার জন্য টিকটকের উন্নত প্রযুক্তি কাজ করছে, এছাড়া ব্যবহারকারীরা তাদের কমেন্টের উপর আরও নিয়ন্ত্রণের সুবিধা পাচ্ছে। ব্যবহাকারীরা অপ্রাসঙ্গিক বা অনুপযুক্ত বলে মনে করে এমন মন্তব্য শনাক্ত করতে পারে, যেমন- কোনো কমেন্টে ডিজলাইক দেয়ার মাধ্যমে তারা ফিডব্যাক দিতে পারে। এমন কমেন্টগুলো টিকটক সংগ্রহ করে। তবে কনটেন্ট নির্মাতারা যেন ডিজলাইক দেখে হতাশ না হয়ে পড়েন, সে জন্য ডিজলাইক দেয়া ব্যক্তিই কেবলমাত্র নিজের ডিজলাইক দেখতে পারবেন। এটি নির্মাতাদের চোখের সামনে আসবে না।
এছাড়া বিল্ট-ইন সেফটি টুলগুলো ব্যবহার করে টিকটক সেফটি রিমাইন্ডার পরীক্ষা করছে যা নির্মাতাদের মন্তব্য ফিল্টারিং এবং বাল্ক ব্লক এবং অপশন ডিলেট ইত্যাদিতে গাইড করবে। রিমাইন্ডারগুলো এমন নির্মাতাদের কাছে দেখাবে যাদের ভিডিওগুলো আনুপাতিক হারে বেশি নেতিবাচক কমেন্ট পাবে। পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মটি স্ট্রিক্ট কমিউনিটি গাইডলাইন লঙ্ঘন করে এমন কমেন্ট অপসারণ করা অব্যাহত রাখবে। সঙ্গে কনটেন্ট ফিল্টার করার ক্ষমতা এবং একবারে একাধিক কমেন্ট মুছে ফেলা এবং রিপোর্ট করার ক্ষমতা তো রয়েছেই।
কমিউনিটি গাইডলাইনস এনফোর্সমেন্ট রিপোর্টটি টিকটকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।