জনসম্মুখে স্বাধীনভাবে চলাচল করা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য তা আরও কঠিন।
ফায়ার হাইড্রেন্ট, গর্ত, উঁচু-নিচু সিঁড়ি সব ধরনের রাস্তাতেই থাকে। তাই চলার সময় স্বাভাবিকভাবেই একজন অন্ধ ও কম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে অস্ট্রিয়ার স্টার্টআপ মেডিক্যাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক টেক-ইনোভেশন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা নিয়ে এসেছে বিশেষ স্মার্ট জুতা।
‘ইনোমেক’ নামের এই স্মার্ট জুতা অন্ধ ও কম দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর, যা তাদের চলাচল আরও সহজ করে তুলবে।
যা আছে ইনোমেকে:
ইনোমেকে রয়েছে বিশেষ কয়েকটি সেন্সর। এটি অন্ধ ও কম দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিকে সামনে থাকা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে অ্যাকোস্টিক ও ভিজ্যুয়াল সতর্কতা সংকেত দেবে। কম্পন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সতর্ক করা ছাড়াও এই স্মার্ট জুতায় রয়েছে একটি অন্তর্নিমিত ব্যাটারি, একটি প্রসেসিং ইউনিট এবং বেতার সংযোগ।
জুতাগুলোর সামনের অংশে আছে পানি ও ধুলা প্রতিরোধী আবরণ। এটি যেকোনো আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশে সুরক্ষা দেবে।
ইনোমেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাচল:
ব্যবহারকারীর আশপাশের এলাকা নিরাপদ কি-না বা সেখানে চলাচলে কোনো বাধা রয়েছে কি-না টেক-ইনোভেশন তা বিশ্লেষণ করে। এজন্য তারা সেন্সর এবং ক্যামেরার দেওয়া তথ্য থেকে একটি উন্নত অ্যালগরিদম তৈরি করেছে।
অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির এ কাজে সহায়তা করেছে। তাই ব্যবহারকারী যখন হাঁটতে থাকে ইনোমেকের ইন্টেলিজেন্ট ফাংশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেন্সরকে সক্রিয় করে। ব্যবহারকারী থামলে বা বসলে এটি থেমে যায়।
স্মার্ট জুতার বৈশিষ্ট্য:
কার্যকারিতা, ব্যবহারযোগ্যতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য—তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইনোমেক। এটি উন্নতমানের চামড়া দিয়ে তৈরি। ফলে জীর্ণ হলে বা ছিঁড়ে গেলে সহজেই ঠিক করা যায়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি এসব স্মার্ট জুতায় কোনো হিল নেই। এছাড়া জুতার মধ্যে থাকা মেটাল ট্র্যাকের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে সহজে সংযুক্ত করা যায়।
ট্র্যাকটি এমনভাবে ডিজাইন ও সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ডিভাইসটিকে সংযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন করতে পারেন। ইনোমেকের ব্যাটারির কার্যকারিতা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। একটি ইএসবি-সি ক্যাবল ব্যবহার করে এটি রিচার্জ করা যায়। এই জুতাটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছে টেক-ইনোভেশন।
স্মার্ট জুতা যেভাবে কাজ করে:
স্মার্ট জুতা বাধা শনাক্ত করে ও পূর্বনির্বাচিত প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে তোলে। প্রথম সতর্কীকরণ বার্তা দেওয়া হয় হ্যাপটিক বা ভাইব্রেশনের মাধ্যমে। এ কম্পন সরাসরি জুতার ওপর করা হয়, যাতে ব্যবহারকারী সামনের বাধা টের পায়। দ্বিতীয় সতর্কীকরণ বার্তা হলো অ্যাকোস্টিক ফিডব্যাক। এটি ব্লুটুথ-লিংকযুক্ত স্মার্টফোন বা হাড়ের কন্ডাকশন হেডফোনের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
ব্যবহারবিধি ও বাজারমূল্য
বর্তমানে ইনোমেক শুধু আইওএসে ব্যবহার উপযোগী। এজন্য একটি অতিরিক্ত অ্যাপ ব্যবহার করা হয়, যা প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের ডিভাইসের ব্যাটারির স্থিতি নিরীক্ষণ করতে এবং জুতা অনুসন্ধান ফাংশন ব্যবহার করতে সহায়তা করে।
ইনোমেকের বাজারমূল্য ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০০ ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি। তবে পর্যায়ক্রমে একে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেক-ইনোভেশনের।