বহুদিন ধরে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁছছিলেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না সঠিক কারণ।
তাঁরা জানাচ্ছেন, আমাদের মিল্কিওয়ে দেখতে সর্পিল ও চ্যাপ্টা চাকতির মতো হলেও একে চারপাশ থেকে ঘিরে আছে ডার্ক ম্যাটারের এক বিশাল গোলক, যা দৃশ্যমান নয়, শুধু মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণেই এর অস্তিত্ব শনাক্ত করা যায়।
জ্যোতির্পদার্থবিদরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার যেমন মিল্কিওয়ের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে, তেমনি অজানা ও রহস্যময় ডার্কম্যাটারের সম্পর্কেও আরো বিশদে জানতে সাহায্য করবে।ডার্কম্যাটারের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়েও বহুদিন গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই গবেষণার পর জানা যাবে, মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলোর বিকাশে ডার্কম্যাটার কিভাবে প্রভাব ফেলে।
ডার্ক ম্যাটার দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রহেলিকা হয়ে আছে। গোটা মহাবিশ্বের মোট যত বস্তু আছে, তার ৮৫ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। মাত্র ১৫ শতাংশ দৃশ্যমান বস্তু।
ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় টান এদেরকে একত্রে ধরে রাখে। অর্থাৎ গ্যালাক্সিতে গ্রহ-নক্ষত্রদের আটকে রাখার জন্য ডার্ক ম্যাটার আঠার মতো কাজ করে।
২০২২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকদলটি একটা গবেষণা করেন। তাঁরা কম্পিউটার সিমুলেশন করে জানার চেষ্টা করেন, ডার্ক ম্যাটার ছাড়া মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিজেই যদি গোলক হতো, তাহলে কেমন হতো। তাদের সেই সিমুলেশনে দেখা যায়, মিল্কিওয়ের গোলক- যেটাকে ‘নাক্ষত্রিক গোলক’ বলছেন বিজ্ঞানীরা, সেটা আর ডার্ক ম্যাটারের গোলকের আকৃতি একই রকম, যদিও ডার্ক ম্যাটারের গোলক অনেক অনেক বড়। তারা এটাও দেখেছেন, খুব সহজেই নাক্ষত্রিক গোলকটাকে ডার্ক ম্যাটার গোলকের ভেতর বসিয়ে দেওয়া যায়।
গবেষক দলের প্রধান জিওন জেসি হান বলেন, ‘যদি আমাদের গ্যালাক্সি নিজে নিজে বিকশিত হতো তাহলে এমন চাকতির মতো না হয়ে গোলকের মতোই হতো। এটা চাকতির মতো হয়েছে, তার কারণ বহু আগে আরেকটা গ্যালাক্সির সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে এর। তারপর দুটিতে মিলে একটা সর্পিল চাকতি আকৃতির গ্যালাক্সি তৈরি করেছে।’
তিনি মনে করেন, গ্যালাক্সির যে সর্পিল গঠন, সেগুলো অনেকটা দোমড়ানো-মোচড়ানো, এসবের ব্যাখ্যা একমাত্র ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি সাপেক্ষেই দেওয়া সম্ভব। গ্যালাক্সিদের বিবর্তন ব্যাখ্যায় তাঁদের এই গবেষণা মাইলফলক বয়ে আনবে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে, এমনটাই মনে করছেন হান।
সূত্র : The Milky Way is warped, and it might be the work of dark matter