ন্যাশনাল রোমিং যুগে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক এবং বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের মধ্যে এক্টিভ শেয়ারিং পাইলটিং চালুর ফলে স্মার্ট সংযুক্তি সম্প্রসারণে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন করলো বাংলাদেশ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক একটিভ শেয়ারিং পাইলটিংয়ের উদ্বোধন করেন।
প্রতিমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আগারগাওয়ে আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যে ন্যাশনাল রোমিং পাইলটিংয়ের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট সংযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ন্যাশনাল রোমিং স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবনী পদক্ষেপ বলে আমি বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল রোমিংয়ের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এটি উভয় অপারেটরের জন্যই ইতিবাচক, কারণ এর মাধ্যমে তারা একে অপরের অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।
বিশেষ করে এর মাধ্যমে টেলিটক সারা দেশে বাংলালিংক-এর ১৬,০০০ সাইট ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সম্প্রসারণ করার সুযোগ পাবে। অপরদিকে বাংলালিংকও টেলিটকের প্রায় ৬ হাজার টাওয়ার ব্যবহার করে লাভবান হবে। তিনি বলেন, একটি সুখি ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট জাতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি ১৯৭৩ সালে আ্ন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের সদস্যপদ অর্জন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, টেশিস ও ক্যাবল শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণসহ ড.কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। পচাত্তরের পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অপশক্তি ও তাদের দোসররা বাংলাদেশকে দীর্ঘ ২১ বছর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। ১৯৯২ সালে বিনামাশুলে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করে।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টি মোবাইল অপারেটরকে লাইসেন্স প্রদান এবং ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দুনিয়ায় সংযুক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয় এর পরিকল্পনায় ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বিশ্বের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ন্যাশনাল রোমিংয়ের ফলে বাংলালিংক ও টেলিটক গ্রাহকরা কোনো স্থানে তাদের ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক দুর্বল বা অনুপস্থিত হলে সেখানে অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবার সুযোগ পাবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত এই ব্যবস্থার সীমিত পর্যায়ের পাইলটিংয়ের উদ্বোধন করা হলো আজ। পর্যায়ক্রমে এটি সকল বাংলালিংক ও টেলিটকের সকল গ্রাহককে এ সুবিধার আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, স্মার্ট কানেক্টিভিটির সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। টেলিটক ও বাংলালিংকের মধ্যে রোমিং চালুর বিষয়টি দেশের ডিজিটাল সংযুক্তির বিকাশে আরও একটি মাইলফলক। বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যে এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব দেশব্যাপী টেলিটক ও বাংলালিংক গ্রাহকদের মোবাইল সংযোগের পরিসর বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অপারেটর দুইটির মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ে ভূমিকা রাখবে। এর ফলে গ্রাহকরা দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাভারেজের মাধ্যমে ভয়েস, এসএমএস ও ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোাগাযোগ প্রযুক্তি সচিব মো: সামসুল আরেফিন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএসএম জাফর উল্লাহ, বাংলালিংক এর সিইও এরিক অস এবং টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: হাবিবুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে টেলিটক ও বাংলালিংকের মধ্যে ন্যাশনাল রোমিং পাইলটিংয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।