English

24 C
Dhaka
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
- Advertisement -

আমাদের মস্তিষ্কে রিল-শর্টসের কতটা প্রভাব ফেলে জানেন?

- Advertisements -

বর্তমান সময়ে এমন মানুষ কি খুঁজে পাওয়া যাবে যে, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবে রিল বা শর্টস দেখা ছাড়াই একটি দিন কাটিয়েছেন? স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া অনেকটা কঠিন। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতই রিল বা শর্টস দেখা হয়। কারও কারও আবার দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে এসব দেখা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি রিলের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ তিন মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ইনস্টাগ্রামে হয়ে থাকে ৯০ সেকেন্ড, আর ইউটিউবে শর্টসের দৈর্ঘ্য এক মিনিটের বেশি নয়। এসব মাধ্যমগুলোর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওগুলো অনেকটা নেশার মতো। কেউ একবার দেখা শুরু করলে তা অবিরত দেখতেই থাকেন। আর অবিরত রিল বা শর্টস দেখার জন্য মস্তিষ্কে কী হচ্ছে―তা জানেন কি?

এ ব্যাপারে চীনের গবেষকরা একটি বিশ্লেষণ জানিয়েছেন। ডেভ ইউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্লেষণে গবেষকরা রিল-শর্টস দেখার অভ্যাস মস্তিষ্কে, মানসিক স্বাস্থ্যে এবং আচরণে কেমন প্রভাব ফেলে, তা জানিয়েছেন।

শিক্ষাবিষয়ক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সাইয়ের (PSY) মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রি রাইজিক বলেন, ছোট ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস মানব মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। সেসব পরিবর্তনের মধ্যে একটি হচ্ছে অধিক হিংসাত্মক কিংবা পরশ্রীকাতর হওয়া। অন্য কারও সাফল্য বা জীবনযাত্রা দেখে হিংসা অনুভব হওয়া।

২০২৪ সালে চীনের ইন্টারনেট উন্নয়নের ৫৪তম পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল চীনেই শর্টস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। যা দেশটির মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশেরও বেশি। আর এই শর্টস ব্যবহারকারীর সংখ্যার মধ্যে কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য।

চীনের তিয়ানজিন নরমাল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা ১১২ কলেজশিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। রিল ও শর্টস মস্তিষ্কে কেমন প্রভাব ফেলে, সেসবই উঠে এসেছে গবেষণায়।

ঈর্ষা-আসক্তি: রিল বা শর্টসে ঈর্ষাকাতর মানুষদের আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কখনো কখনো নেতিবাচক আবেগ থেকে তারা মনকে ভুলিয়ে রাখার জন্য বা অন্য কারও সঙ্গে নিজের তুলনা করতে শর্টসে ডুবে যান।

মস্তিস্কের পরিবর্তন: রিল বা শর্টসে আসক্তদের মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন খেয়াল করা যায়। মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রাখে, সেই অংশে বেশি পরিবর্তন দেখা যায়। আবার এর অর্থ এমনও নয় যে, শর্টস বা রিল মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে এ অভ্যাস মস্তিস্কের কার্যকারিতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

জিনের ভূমিকা: গবেষণায় কিছু জিন পাওয়া গেছে, যার কার্যকারিতা ছোট ছোট ভিডিওর আসক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা থেকে স্পষ্ট, এ ধরনের আসক্ত হওয়ার প্রবণতা কিছুটা জন্মগতভাবেও হতে পারে।

ঝুঁকিতে কিশোর-কিশোরীরা: নির্দিষ্ট কিছু জিন বয়ঃসন্ধিকালে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। যা থেকে কিশোর-কিশোরীদের শর্টস বা রিলসের প্রতি আসক্তি হওয়ার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।

মস্তিষ্কে যেভাবে প্রভাব ফেলে রিল-শর্টস:

পুরস্কার গ্রহণের অভ্যাসে পরিবর্তন: কিছু রিল ও শর্টসে দ্রুত দৃশ্য পরিবর্তন হতে দেখা যায়। এসব দৃশ্য ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়ে থাকে আবেগকে। এ ধরনের ভিডিওগুলো এক ধরনের ‘পুরস্কৃত’ করে মস্তিষ্ককে। অনেকটা এভাবে বলা যায়, মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম। আর মস্তিস্ক যদি এ ধরনের উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়, তাহলে মস্তিষ্ক এ ধরনের পুরষ্কার আরও চাইতে থাকবে। যা থেকে ভিডিও দেখার আসক্তি বাড়তে থাকে।

মনোযোগ কমে যাওয়া: মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশ মানুষের পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছোট ছোট ভিডিও বেশি পরিমাণ দেখা হলে এ অংশের কার্যকরীতা কমে যেতে পারে। এ জন্য ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়। যা থেকে কোনো কিছুর ব্যাপারে পরিকল্পনা করে কঠিন মনে হয়।

তথ্য গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা: দীর্ঘদিন ধরে রিল বা শর্টস দেখার ফলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভিডিওগুলোর তথ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হতে পারে। এ থেকে দীর্ঘ ও জটিল কোনো ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া কঠিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ধীরগতিও হতে পারে।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে জটিলতা: প্রায়ই দেখা যায় নেতিবাচক আবেগ, যেমন ঈর্ষা বা দুঃখ থেকে নিজেকে ভালো রাখতে রিল বা শর্টস দেখেন অনেকে। এসব সাময়িক সময়ের জন্য আপনাকে ভালো রাখলেও আপনার নেতিবাচক আবেগ দীর্ঘমেয়াদে বাড়িয়ে দিতে পারে।

সার্বিকভাবে গবেষণা অনুযায়ী, রিল বা শর্টসের কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক থাকতে পারে। তবে এসব অতিরিক্ত দেখার ফলে অভ্যাসগত পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। সেসব অভ্যাস সবার ওপরই একই ধরনের প্রভাব ফেলবে, এমনটাও নয়। মূলত ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারের ধরনের ওপর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে আরও অধিকতর গবেষণার প্রয়োজন। তবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সচেতন থাকা জরুরি।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন